কয়েক দশক আগেও আমরা বাড়িতে কম্পিউটার ব্যবহার করতাম না। শুধু বাড়িতেই না, বিশেষ নামিদামি অফিস না হলে অফিসেও কম্পিউটারের ব্যবহার দেখা যেতো না। সময়ের সাথে সাথে মানুষের জীবনযাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। বর্তমানে মানুষ কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোনের উপর নির্ভর। মোদ্দাকথা প্রযুক্তি ই বর্তমানের জীবনব্যবস্থার সবকিছু। এবং এর সুবাদে এখন প্রায় সবার ঘরেই ল্যাপটপ বা কম্পিউটার এর দেখা পাওয়া যায়। সময় যত এগোচ্ছে, তার সাথে সাথে নতুনসব প্রযুক্তি উদ্ভবন হচ্ছে। বর্তমান সময়ে “Computing technology” প্রচুর উন্নত হয়ে গিয়েছে। কারণ, প্রায় প্রত্যেক কোম্পানি যেকোনো ক্ষেত্রে এই উন্নতমানের কম্পিউটিং প্রযুক্তির ব্যবহার করছেন। এই আধুনিক কম্পিউটিং টেকনোলজির মধ্যে, “ক্লাউড কম্পিউটিং টেকনোলজি” (Cloud computing technology) জনসাধারণের জন্য অনেক লাভজনক প্রযুক্তি হিসেবে প্রমানিত হয়েছে। আমাদের আজকের বিষয় হলো EDGE Computing। তবে Edge কম্পিউটিং সম্পর্কে জানার আগে ক্লাউড কম্পিউটিং সম্পর্কে আলোচনা করা যাক।
সহজ ভাষায় ক্লাউড কম্পিউটিং অর্থ হলো কম্পিউটারের হার্ড ড্রাইভের পরিবর্তে ইন্টারনেটে ডাটা এবং প্রোগ্রামগুলোকে Store এবং Access করার ব্যবস্থা। ক্লাউড কম্পিউটিং এ ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন, ডাটা স্টোরেজ, সার্ভার, ডাটাবেস, নেটওয়ার্কিং, সফ্টওয়্যার এর সরঞ্জাম এবং অ্যাপ্লিকেশন হোস্ট করা যায়। ক্লাউড কম্পিউটিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে, ডাটাগুলোকে “Server” এবং “Client” এর মধ্যে অনেক তাড়াতাড়ি আদান-প্রদান করা যায়। যার ফলে, ব্যবহারকারীরা অনেক দ্রুত একটি ওয়েবসাইট কিংবা সফটওয়্যার এর সার্ভিস ব্যবহার করতে পারে। এবং এই কারণে বর্তমানে ক্লাউড কম্পিউটিং এবং এর সার্ভিসের চাহিদা ও ব্যবহার ব্যাপকহারে বেড়ে চলেছে।
ক্লাউড কম্পিউটিং এমন একটি আধুনিক প্রযুক্তি যেখানে যেকোনো file, data, database, programs ইত্যাদি গুলোকে জমা করা যায় ইন্টারনেটের সক্রিয় কিছু remote server এর network ব্যবহার করে। এতে করে data processing বা data store করার ক্ষেত্রে personal computer, local server কিংবা local hard drive ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়ে না। এবং এটির আরও একটি সুবিধা হলো, data ও file গুলো যেকোনো জায়গা থেকে access করা যায়। কারণ, data ও file গুলো ইন্টারনেটের remote server network এ রয়েছে। বর্তমানে প্রায় ৮৫% online website গুলো cloud computing এর মাধ্যমে ওয়েবসাইটের file ও data গুলো manage এবং process করছেন। কারণ, cloud storage এর মাধ্যমে ওয়েবসাইট গুলো অনেক দ্রুত কাজ করে, এবং ওয়েবসাইটের data ও file গুলো অধিক সুরক্ষিত থাকে।
উদাহরণ আকারে ক্লাউড কম্পিউটিং সম্পর্কে আলোচনা করা যাক। আমরা জানি, যখন data এবং অন্যান্য programs গুলোকে একটি local hard drive বা personal computer এ রেখে process বা manage করা হয়, তখন সেটাকে “Local computing” বলা হয়। কিন্তু আমরা যদি আমাদের ডাটাগুলো ইন্টারনেট ব্যবহার করে কোনো cloud storage service এ রাখি, তাহলেই এটি ক্লাউড কম্পিউটিং। যেমন গুগল এর অনেক জনপ্রিয় cloud storage service রয়েছে, যেমন “Google Drive”। Google drive হলো একটি cloud storage service, যেটার ব্যবহার করে আমরা গুগলের cloud server এ আমাদের files, data ও programs গুলো জমা করে রাখতে পারি। Google drive ব্যবহার করার ক্ষেত্রে শুধু প্রয়োজন পড়ে একটি computer / mobile, web browser এবং Internet এর। Computer / mobile দিয়ে google drive এর ওয়েবসাইট বা এপ্লিকেশন ব্যবহার করে, বিভিন্ন data (images, documents, videos etc.) গুলোকে Google drive এ আপলোড করা যায়। এতে করে data গুলো computer / mobile এর physical hard disk এর পরিবর্তে ইন্টারনেটে সক্রিয় google এর remote server এ জমা হয়। যার ফলে data ও file গুলো “internet based cloud network” হয়। এবং এটি ইন্টারনেটের মাধ্যমে manage, process ও access করাও যায়। যদি উক্ত কম্পিউটার বা কম্পিউটারে থাকা physical hard disk নষ্টও হয়ে যায়, তাহলেও কোনো ভয় নেই। কারণ, ফাইলগুলো google drive এর service ব্যবহার করে, ইন্টারনেটের রিমোট সার্ভারে রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যেকোনো computer / mobile ব্যবহার করে, উক্ত ফাইলগুলোকে ডাউনলোড ও ব্যবহার করা যাবে। এভাবে cloud service ব্যবহার করে file, data, database, program ইত্যাদি গুলোকে internet based remote server এ রাখা এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে process ও manage করার প্রক্রিয়াকেই বলা হয় cloud computing। YouTube হলো আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ cloud storage এর। কারণ এখানে কোটি কোটি ইউজারের ভিডিও ফাইলগুলো host করা হয়। Facebook ও ক্লাউড কম্পিউটিং এর উদাহরণ। কারণ, কোটি কোটি মানুষের upload করা images, videos এবং data গুলো ফেসবুক নিজের data center এ host করছে। এবং আমরা ফাইলসগুলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে যেকোনো সময় manage, process এবং access করতে পারছি। এছাড়াও আরো অনেক রকমের ক্লাউড কম্পিউটিং সার্ভিস রয়েছে যেমন, “Amazon cloudFront”, “Google cloud”, “Alibaba cloud”, “Digitalocean” ইত্যাদি। এগুলো ব্যবহার করে আমরা ফাইলস গুলো cloud server এ host করতে পারবো।
Cloud computing এর সুবিধা হলো অনেক কম খরচে cloud services ব্যবহার করা যায়। ইন্টারনেটের মাধ্যমে যেকোনো জায়গা থেকে data, apps বা files গুলো access ও manage করা যায়। অনলাইন ব্যবসার ক্ষেত্রে দামি দামি hardware, utilities বা data center তৈরি করতে হয় না। এবং Cloud storage computing এর সবচেয়ে সেরা সুবিধা হলো “নিরাপত্তা” (security)। কারণ data ও file গুলো সুরক্ষিত থাকে। নিজের প্রয়োজনমত storage এবং virtual requirements গুলো বাড়িয়ে বা কমিয়ে নেয়া যায়। এই আধুনিক কম্পিউটিং প্রযুক্তির ক্ষেত্রে যতটুকু resource ব্যবহার করা হয়, কেবল ওই ব্যবহারের ওপরেই খরচ করতে হয়। এবং একটি cloud platform থেকে অনেক সহজেই অন্য cloud platform এ migrate করা সম্ভব।
১৯৯০ সালে Salesforce নামক একটি কোম্পানি প্রথম ক্লাউড কম্পিউটিং পরিষেবা দেন। বর্তমান বিশ্বের শীর্ষ ও জনপ্রিয় ১০ টি ক্লাউড কম্পিউটিং সংস্থাগুলো হলো :-
- Microsoft Azure
- Amazon Web Services (AWS)
- Google Cloud Platform
- Kamatera
- Adobe
- IBM Cloud
- VMware
- Red Hat
- Rackspace
- Oracle Cloud
এবং জনসাধারণের জন্য ক্লাউড কম্পিউটিং এর জনপ্রিয় কিছু অ্যাপ্লিকেশন ও সার্ভিসগুলো হলো :-
- Dropbox
- skype
- mozy
- Outright
- Quickbooks
- Google apps
- Evernote
- Moo
- Amazon Lumberyard
- Spotify
- Hubspot
- MySpace
- Microsoft Office 365
ক্লাউড কম্পিউটিং এর ব্যবহার
বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় এই আধুনিক কম্পিউটিং প্রযুক্তি। যেমন :-
- File storage এর ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমানে ব্যবহার করা হয়।
- Online application এর backup নেওয়ার ক্ষেত্রে cloud storage এর ব্যবহার করা হয়।
- Website এবং web application তৈরি করা ক্ষেত্রে অধিক পরিমানে cloud hosting services ব্যবহার করা হয়।
- Personal files এবং data গুলো store করার জন্য
- Application test এবং development এর ক্ষেত্রে।
EDGE Computing
এবার আলোচনা করা যাক, EDGE Computing সম্পর্কে। EDGE কম্পিউটিং হলো ক্লাউড কম্পিউটিং এর একটি এক্সটেনশন। ক্লাউড কম্পিউটিং থেকে ডাটা প্রসেসিং হয়ে আমাদের ডিভাইসে লোড হতে কিছু সময় লাগে আর এই সময়কে কম করার জন্য EDGE কম্পিউটিং এর ব্যবহার করা হয়। ক্লাউড কম্পিউটিং এ যেমন সার্ভারের সঙ্গে ডিভাইস সরাসরি কানেক্ট করতে পারে ইন্টারনেটের মাধ্যমে। কিন্তুু EDGE কম্পিউটিং এ ক্লাউড সার্ভের ও ডিভাইস এর মাঝে একটি লোকাল ডিভাইস থাকে। EDGE কম্পিউটিং ব্যবহারের ক্ষেত্রে, ডিভাইসটি ক্লাউড সার্ভারের সঙ্গে ডাটা ট্রান্সফার হয়, তবে এটি সম্পূর্ণ লোকাল ডিভাইসের সাহায্যে হবে।
উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, বাড়ির সামনে একটি CCTV ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। এটির আসল উদ্দেশ্য হলো, কে কে বাড়িতে আসছে তা দেখা। এখন যদি CCTV ক্যামেরাটিকে ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের সঙ্গে যুক্ত করা হয় তাহলে ক্যামেরাটি সবসময় চালু রাখতে হবে। আর CCTV ক্যামেরাটি সবসময় ভিডিওগুলো ক্লাউড সার্ভার এ স্টোর করতে থাকবে। যার ফলে ডাটা ট্রান্সফার বেশি হবে এবং ব্যান্ডউইডথ বেশি ব্যবহার করা হবে। বেশি ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করলে বেশি খরচ হয়। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য ক্যামেরাতে যদি কোনো motion detector sensor লাগিয়ে দেওয়া হয় তাহলেই সব সমাধান। এই মোশন ডিটেক্টর (motion detector) সেন্সরের মাধ্যমে সিসিটিভি (CCTV) ক্যামেরা তখনই কাজ করবে, যখন কোনো মানুষ বাড়িতে প্রবেশ করবে। এবং এই রেকর্ড করা ভিডিও ক্লাউড সার্ভার এ পাঠাবে। যার ফলে খুব কম পরিমাণ ডাটা ক্লাউড সার্ভারে স্টোর হবে। এবং সারাক্ষণ ইন্টারনেটের মাধ্যমে ভিডিও ট্রান্সফার প্রয়োজন হবে না সেইসাথে খুব কম ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করা হবে। যখন ঐ ভিডিওটি দেখা হবে, তখন শুধু মাত্র কেউ আসার রেকর্ড করা ভিডিওটি দেখা যাবে। এতে করে সময়ও অনেক কম লাগবে। কম সময়ে ছোট একটি ভিডিও দেখে বোঝা যাবে, বাড়িতে কে কে এসেছিল। এখানে CCTV ক্যামেরার motion detector (মোশন ডিটেক্টর) সেন্সরকে EDGE প্রযুক্তি বলা যায়।
বর্তমানে আমরা দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি পদে পদে internet of things (IoT) এর ব্যবহার করছি। এই IoT কে সঠিক ভাবে ব্যবহার করার জন্য দ্রুত ইন্টারনেটের সাথে EDGE কম্পিউটিংয়ের ও প্রয়োজন। EDGE computing টেকনোলজি এর মাধ্যমে ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত ডিভাইসগুলো ব্যবহার করলে, পরিষেবা অনেক দ্রুত এবং সহজ হয়।
আমরা যখন ইন্টারনেট ব্যবহার করি তখন কোনো জায়গায় অবস্থিত সার্ভার থেকে ডাটা আমাদের মোবাইল,, কম্পিউটার ও ল্যাপটপে লোড করা হয়। কিন্তু যদি EDGE কমপিউটিং ব্যবহার করা হয় তাহলে ক্লাউড কমপিউটিং ও ডিভাইসের মাঝে আরও একটি সার্ভার ব্যবহার করা হয়। এবং ঐ সার্ভারটি নিকট কোথাও অবস্থিত থাকে। যেমন যখন মোবাইল ফোন দিয়ে কোনো ওয়েবসাইট ভিজিট করা হয়, তখন ওয়েবসাইটটি কাছের কোনো সার্ভারে লোড হয় এবং ওই সার্ভার থেকে মোবাইল ও অন্যান্য ডিভাইসে লোড হয়। এবং ঐ ওয়েবসাইটটি কাছের সার্ভারের ক্যাচ মেমোরিতে সঞ্চিত থাকে। পরবর্তী সময়ে যখন ওয়েবসাইটটি ভিজিট করা হয় তখন ঐ কাছের সার্ভারের ক্যাচ মেমোরি থেকে লোড হবে। যার ফলে ওয়েবসাইটটি খুব তাড়াতাড়ি লোড হবে। ক্লাউড সার্ভারের থেকে ডাটা লোড না হওয়ার কারণে ব্যান্ডউইথ ও কম ব্যবহার করা হয়।
EDGE কম্পিউটিংয়ের সুবিধা :-
EDGE কমপিউটিং একটি নতুন টেকনোলজি, দৈনন্দিন জীবনকে আরো সহজ করার জন্যই এটি ব্যবহার করা হয়। এই প্রযুক্তির সুবিধাগুলো হলো :-
– ব্যান্ডউইথ কম ব্যবহার করা হয়, যার ফলে খরচ কম লাগে।
– কম স্টোরেজের প্রয়োজন হয়।
– খুব দ্রুত সার্ভিস দেয় যেকোনো ইন্টারনেটভিত্তিক কাজের ক্ষেত্রে।
তবে EDGE Computing এর অসুবিধাও রয়েছে। যেহেতু ডাটা অথবা EDGE ডিভাইসটি ব্যবহারকারীর কাছে থাকে। তাই ডাটা সুরক্ষা অথবা EDGE ডিভাইসের সুরক্ষায় ঘাটতি রয়েছে। ক্লাউড সার্ভারের মতো Edge কম্পিউটিং তুলনামূলক কম সুরক্ষিত।
এই ছিলো Cloud Computing ও EDGE Computing সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। যেকোনো প্রশ্ন জাগলে নির্দ্বিধায় কমেন্টবক্সে কমেন্ট করুন। এবং টেকনোলজি সম্পর্কে আরও তথ্য জানতে আমাদের সঙ্গেই থাকুন। সেইসাথে আমাদের অন্যান্য আর্টিকেলগুলোও পড়তে পারেন। ধন্যবাদ।