ব্লকচেইন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

ব্লকচেইন শব্দটি বর্তমানে প্রচুর পরিমানে পরিচিত। কিন্তু ব্লকচেইন কি? ব্লকচেইন কিভাবে কাজ করে? ব্লকচেইনের সুবিধা কি? এই প্রশ্নগুলো অবশ্যই মাথায় আসবে। প্রথমেই বলে রাখি, ব্লকচেইন প্রযুক্তি ইন্টারনেট জগত-এর নতুন ধরনের মেরুদণ্ড তৈরী করেছে। ব্লকচেইন (Block-chain) একটি ইংরেজি শব্দ। যেটির বাংলা অর্থ দাঁড়ায়, “ব্লকের তৈরী শিকল”। এই সিস্টেমে প্রতিটি ব্লক একেকটি একাউন্ট যার প্রতিটি ব্যবস্থাপনা চেইন আকারে পরিচালিত হয়। ব্লকচেইন প্রযুক্তি তথ্য সংরক্ষণ করার নিরাপদ ও সুরক্ষিত পদ্ধতি।

ব্লকচেইন-এর উৎপত্তি

ব্লকচেইন নিয়ে সর্বপ্রথম কাজ করা হয় ১৯৯১ সালের দিকে। তবে এটি পুরোপুরি বেকার পড়ে ছিলো ২০০৮ সাল পর্যন্ত। এরপর ২০০৯ সালে সাতোশি নাকামাতো নামের এক ব্যক্তি এটির প্রকৃত ব্যবহারকে কাজে লাগান ক্রিপ্টোকারেন্সি তথা বিটকয়েন লেনদেনের মাধ্যমে। এই বিটকয়েন ট্রানজেকশন দেখে সারাবিশ্ব বুঝতে পারে ব্লকচেইন সম্পর্কে। যার ফলে ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার সারাবিশ্বে বেড়ে যায়।

ব্লকচেইন কি ও কিভাবে কাজ করে

ব্লকচেইন হচ্ছে ডিস্ট্রিবিউটেড ওপেন লেজার। ব্লকচেইন ব্যবহার করে যে ট্রানজেকশন করা হয় সেটি চেইন সিস্টেমে একটি লেজারে স্টোর হয়ে যায়। সহজভাবে বিশ্লেষণ করি, ধরা যাক আমি কোনো ব্যক্তিকে বিটকয়েন পাঠাবো। তখন আমার ট্রানজেকশনটি একটি ব্লকের (block) মধ্যে নেওয়া হবে। এরপর security এর জন্য ব্লকটি একটি Hash এর মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়া হবে৷ Hash হচ্ছে ফিঙ্গারপ্রিন্টের মতো, কখনো যদি ব্লকে পূর্বের hash পরিবর্তন করা হয় তাহলে সেটি আর একই ব্লক থাকবে না, আরেকটি ব্লক হয়ে যাবে। তো এরপর বলা যাক, প্রতিটি ব্লকে তার পূর্বের hash যুক্ত থাকে। আর এইভাবে একটি ব্লক আরেকটি ব্লকের সাথে সংযুক্ত হয় এবং এরপর যত ট্রানজেকশন করা হয়, সেগুলো প্রতিটি ব্লকের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। আর এইভাবেই তৈরী হয় শক্তিশালী চেইনের। এই চেইনের মাধ্যমে যেই নথিপত্র তৈরী হয় ভবিষ্যতের জন্য সেটিকে বলা হয় লেজার (laser)। আর সেখান থেকে আমরা সকল ট্রানজেকশন দেখতে পাই। সিস্টেমের ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে প্রতিটি ব্লক তৈরী হতে ১০ মিনিট বা এর কমবেশি সময় লেগে থাকে। এটিকে বলা হয় Proof-of-work। আরেকটি ব্লক তৈরী হতে সময় নেয়ার কারণ সঠিকভাবে পূর্বের ব্লকগুলো গণনা করে এরপরের ব্লকটি চেইনে যোগ করা হয়।

ব্লকচেইনের সিকিউরিটি বিষয় কাজ করে এই Hash ও Proof-of-work এর মাধ্যমে। নিচে একটি ব্লকচেইনের উদাহরণ দেয়া হলো :-

Block serialHashPrevious Hash
1st block2ZB10000
2nd block 7C2Z2ZB1
3rd block3DFV7C2Z

উপরের টেবিলে দেখা যাচ্ছে, প্রতিটি ব্লকে রয়েছে Hash ও Previous Hash। ৩য় ব্লকের Previous hash, ২য় ব্লকের hash এর সাথে যুক্ত। ২য় ব্লকের Previous hash, ১ম ব্লকের hash এর সাথে যুক্ত। ১ম ব্লকের কোনো Previous hash নেই কারণ এটি প্রথম ব্লক। প্রথম ব্লককে বলা হয় Genesis block। এরপর এই ধারাবাহিকতায় ব্লকচেইন চলতে থাকে। এর মাঝে যদি কোনো একটি ব্লকের hash পরিবর্তন করা হয়, তাহলে এরপরের প্রতিটি ব্লক invalid হয়ে যায়।

ব্লকচেইনের সুবিধা

ব্লকচেইন খুবই নিরাপদ ও দ্রুতগামী প্রযুক্তি। যদি কেও ব্লকচেইন প্রযুক্তি হ্যাক করে তথ্যের কোনো গড়মিল করতে চায়, তাহলে তা পুরোপুরি অসম্ভব। সেইসাথে খুব কম সময়ের মাধ্যমে যেকোনো তথ্য বা লেনদেন ট্রানজেকশন সম্পূর্ণ করা যায়। এজন্য দিন দিন ব্লকচেইনের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। Cryptocurrency লেনদেন এর মাধ্যমে শুরু হয়েছিলো ব্লকচেইনের ব্যবহার। তবে এখন অনেক কাজের জন্য ব্লকচেইন ব্যবহারের পরিকল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। যেমন- ব্যাংকিং, কর সংগ্রহ, মেডিকেল রেকর্ডস, ডিজিটাল নোটারি ইত্যাদিতে এর ব্যবহারের জন্য গবেষণা চলছে।

এই ছিলো ব্লকচেইন প্রযুক্তি সম্পর্কে বিস্তারিত সব তথ্য। আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন। টেকনোলজি সম্পর্কে আরও তথ্য জানতে আমাদের সঙ্গেই থাকুন। সেইসাথে আমাদের অন্যান্য আর্টিকেলগুলোও পড়তে পারেন। ধন্যবাদ।