মানব সভ্যতার বিকাশে বিজ্ঞানের যে সব আবিষ্কার অনন্য ভূমিকা পালন করেছে, তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো ইন্টারনেট। বিশ্ববিস্তৃত যোগাযোগ ব্যবস্থার যুগান্তকারী এই মাধ্যমটির নাম হলো ইন্টারনেট। পর্যায়ক্রমে উন্নতির সাথে সাথে প্রসার পেয়েছে ইন্টারনেট, এবং তা আজ মহাসমুদ্রের ন্যায় বিশাল এক ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। বর্তমান সময়ে ইন্টারনেট বিহীন একটি দিন কল্পনাও করা যায় না। মানবজাতির জীবনের অন্যতম অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই ইন্টারনেট। সবার এখন প্রায় কাজ ই ইন্টারনেটের মাধ্যমে হয়। কারো সাথে যোগাযোগ করা থেকে শুরু করে যেকোনো পণ্য কেনা সবই করা হয় ইন্টারনেটে। কোনোকিছু জানার থাকলে কিংবা কোনো বিষয়ে প্রশ্ন জাগলে, শুধুমাত্র একটি সার্চ আর তক্ষুনি সামনে হাজির হয়ে যায় হাজার হাজার ফলাফল। এমতাবস্থায়, এত তথ্য ও সুযোগ সুবিধার ভান্ডার দেখে আপনার আমার যে কারোরই মনে হতে পারে এটাই পুরো ইন্টারনেট জগৎ। কিন্তু আসলে তা নয়! অবাক করা বিষয় এই যে, সমগ্র ইন্টারনেট জগৎ এর মধ্যে আমাদের সামনে দৃশ্যমান অংশতে শুধুমাত্র ১০% ডাটা রয়েছে। বাকি ৯০% ডাটা রয়েছে ডার্ক ওয়েব এ। আমরা যখন কোন বিষয়ে সার্চ দেই আর গুগল তার লক্ষ লক্ষ ফলাফল আমাদের সামনে হাজির করে, তা হলো ইন্টারনেটে থাকা মোট তথ্যের মাত্র ১০ শতাংশ থেকে প্রাপ্ত! অর্থাৎ গুগল এর কাছে ইন্টারনেট জগৎ এর মোট তথ্যের ৯০ শতাংশ ই নেই। এটির কাছে থাকা মাত্র ১০ শতাংশ দিয়েই সার্চ এর ফলাফল গ্রাহকের সামনে হাজির করে। এক জরিপে জানা গিয়েছে, দৃশ্যমান ওয়েবে যে পরিমাণ ডাটা সংরক্ষিত আছে তার চেয়ে ৫০০ গুণ বেশী ডাটা সংরক্ষিত আছে অদৃশ্য ওয়েবে। প্রকৃতপক্ষে এই দৃশ্যমান নেট হল মহাসাগরে ভেসে থাকা এক খন্ড হিমবাহ এবং ডার্ক ওয়েব হলো মহাসাগর খোদ নিজে।
গুগল, ইয়াহু বা অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনগুলোতে সম্পূর্ণ ইন্টারনেট জগৎ এর কেবল কিছু অংশ সংরক্ষিত রয়েছে। অর্থাৎ আমরা সাধারণ ইন্টারনেট এর যতটুকু পরিমান ব্যবহার করছি, সেটা সম্পূর্ণ ইন্টারনেটের কেবল কিছু অংশ। এর বাইরের অংশটির বিষয়ে একজন সাধারণ ব্যক্তি কখনোই পুরোপুরি জানতে পারে না। কারণ, ইন্টারনেটের সেই অংশটি সাধারণ ব্যক্তির জন্যে সাধারণ ভাবে উন্মুক্ত নয়। এবং ইন্টারনেট এর এই ভাগ, যেখানে সাধারণ ভাবে প্রবেশ বা এক্সেস করা সম্ভব না, সেটাকেই বলা হয় “ডার্ক ওয়েব” (Dark Web)। এই ডার্ক ওয়েব এ বিভিন্ন ধরণের অবৈধ এবং নিষিদ্ধ কাজ গুলো হয়ে থাকে। যেমন হ্যাকিং, মাদক ব্যবসা, পর্নোগ্রাফি এর মত বিভিন্ন ধরণের অবৈধ কাজ।
ডার্ক ওয়েব সার্চ ইঞ্জিন দ্বারা ইনডেক্স করা হয়না বা যায়না। এবং ডার্ক ওয়েব এর ওয়েবসাইটগুলো প্রকাশ্যে উপলব্ধ করানো হয়না। McAfee এর নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষক আলফান্সো বলেছেন, “ডার্ক ওয়েব অনেক তথ্য নিয়ে তৈরী এবং এটি সার্চ ইঞ্জিন দ্বারা ক্যাটালগড বা আপডেট করা যায় না।” আলফান্সো আ কেজায়া মুনোজ এর গবেষণার মাধ্যমে আরও জানা গিয়েছে, “ডার্ক ওয়েব ইন্টারনেটের ৯০% প্রতিনিধিত্ব করে। এটি ১৯৯৪ সালে শুরু হয়, তখন ডার্ক ওয়েব ‘Hidden Web” নামে পরিচিত ছিলো। ২০০১ সালে ‘Dark Web’ নামকরণ করা হয়”।
এই ডার্ক ওয়েবে থাকা তথ্যগুলো সারফেস ওয়েব অর্থাৎ দৃশ্যমান ওয়েব এর তথ্য থেকে গুনে মানে অনেক এগিয়ে। এটি খুবই সুসজ্জিত এবং প্রাসঙ্গিক। এখানের সাইবার সন্ত্রাসীরা অনেক এগিয়ে থাকে। যেমন, Internet Protocol ^ 6 বের হলেও, দৃশ্যমান ওয়েব এখনো ব্যবহার করছে Internet Protocol ^ 4 এ। অথচ ডার্ক ওয়েব এর প্রায় সব ওয়েবসাইট ই IP^6 ব্যবহার করছে। ডার্ক ওয়েব সমস্ত প্রথার বাইরে অবস্থান করে, গ্রাহ্য করে না কোনো নিয়মকানুন। ডার্ক ওয়েব এর দুর্বোধ্য সব সিস্টেমের কারণেই অপরাধগুলো সব সময় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়।
সাধারণ ওয়েব ব্রাউজার যেমন, “Google chrome”, “Opera Mini”, “Mozilla Firefox ইত্যাদি ব্যবহার করে ডার্ক ওয়েব এর ওয়েবসাইট এক্সেস করা যায় না। কারণ হলো সার্চ ইঞ্জিনগুলো সার্চ তদারকি করে এক ধরনের ভার্চুয়াল রোবট তথা Crawler দিয়ে। এই Crawler ওয়েবসাইটের HTML tag দেখে ওয়েবসাইটগুলোকে লিপিবদ্ধ করে। Text বাদে অন্য ফরম্যাটে থাকা ওয়েবপেেজ খুঁজে পায় না। অন্যদিকে, সাধারণ ওয়েবসাইট এর ডোমেইন এক্সটেনশনগুলো হলো com, net, org, info, in ইত্যাদি। কিন্তু ডার্ক ওয়েবসাইট এর domain extension সম্পূর্ণ আলাদা। ডার্ক ওয়েবের মূল বিশেষত্ব ই হলো, এখানের ওয়েবসাইটগুলো বিশ্বব্যাপী টপ লেভেল ডোমেইন ব্যবহার না করে “Pseudo Top Level Domain” ব্যবহার করে যা কিনা মূল ওর্য়াল্ড ওয়াইড ওয়েবে না থেকে দ্বিতীয় আরেকটি নেটওর্য়াকের অধীনে থাকে। এটির ডোমেইনগুলো Bitnet, Onion, Freenet প্রভৃতি। Onion হলো সবচেয়ে ব্যবহৃত ডোমেইন, এবং এটি Highly Encrypted domain name, যেটা ব্যবহার করা হয় শুধুমাত্র ডার্ক ওয়েবসাইট এর ক্ষেত্রে। এজন্য সাধারণ ওয়েব ব্রাউজার দিয়ে ডার্ক ওয়েব এর সাইটে ঢোকা যায় না। ডার্ক ওয়েব এর ওয়েবসাইট এক্সেস করতে একটি বিশেষ web browser এর প্রয়োজন হয়। ওয়েব ব্রাউজারটি হলো, Tor browser। এটির মাধ্যমেই ডার্ক ওয়েব এর ওয়েবসাইটগুলোতে ঢোকা যায়। বলা জরুরী, এখানে দৃশ্যমান ওয়েব এর মত করে কোন কিছু খুঁজে পাওয়া যায় না। কারণ এখানে গুগল এর মত কোন সার্চ ইঞ্জিন নেই। ডার্ক ওয়েব এর কোনো ওয়েবসাইটের লিংক সংরক্ষিত থাকলে তবেই ওয়েবসাইট এক্সেস করা সহজসাধ্য হয়। এবং ডার্ক ওয়েব এর ওয়েবসাইট লিংক মনে রাখাও যায় না। মূলত লিংকগুলো Unmemorable ও উদ্ভট হয়ে থাকে।
যেমন :- gytkopfswyhnkgsacbnltrwejlppknvqqahk.onion
ডার্ক ওয়েবে ওপেন ওয়েবের মতো সহ সব ধরনের সেবা ই পাওয়া যায়। যেমন মেইল, ফেসবুক, বিভিন্ন ধরনের উইকি, অনলাইন মার্কেটপ্লেস, ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম, সেইসাথে মাদক বেচাকেনার মার্কেটপ্লেস, অপরাধী ভাড়া নেয়ার মার্কেটপ্লেস, এছাড়াও রয়েছে আরো নানা ধরনের সেবা যা ডার্ক ওয়েব থেকে পাওয়া যাবে। আসলে এই ডার্ক ওয়েব জগৎটি খুব ই আলাদা। ওপেন ওয়েবের যে ওয়েবসাইটে পাসওর্য়াড বাদে ঢুকা অসম্ভব, দেখা যায় ডার্ক ওয়েবে সেটি ই অহরহ হচ্ছে। যেকোনো বইয়ের একদম লেটেস্ট এডিশন যা কিনা ওপেন ওয়েবে কপিরাইট ল’এর কারণে নেই, দেখা যায় সেটি ই এখানে দেদারসে আদান প্রদান হচ্ছে। মাইক্রোসফট, অ্যাপেলের প্রোডাক্ট এখানে ৮০% পর্যন্ত ডিস্কাউন্টে পাওয়া যাচ্ছে। শিশু পর্ণোগ্রাফি থেকে শুরু করে নানা ধরনের Genital Mutilation এর ভিডিও যেগুলো কিনা ওপেন ওয়েবে নেই, সেগুলো ই এখানকার হট টপিকস। খুব ই অদ্ভুত সেই জগৎ। এখানে এমন কিছু ওয়েবসাইট আছে যেগুলো মার্জুয়ানা, হিরোইন থেকে শুরু করে সব ধরনের মাদকদ্রব্য হোম ডেলিভারী দেয়। আবার কিছু সাইট আছে যেখানে একে ৪৭ থেকে শুরু করে রকেট লাঞ্চার, মর্টারের মত অস্ত্রও কিনতে পাওয়া যায়। এমনকি কিছু ওয়েবসাইট শিক্ষাও দিচ্ছে কিভাবে গোলা বারুদ বানাতে হয়। বিস্ময় এখানেই শেষ নয়! ডার্ক ওয়েবে টাকার বিনিময়ে কিলারও ভাড়া করা যায়। একজনের আর্টিকেল থেকে জানতে পেরেছি, তিনি বেশ কিছু দিন আগে একটি ডার্ক ওয়েব এর ওয়েবসাইটে ঢুকেন, যেখানে কিলার ভাড়া পাওয়া যায়। সাইটে ঢুকে তিনি দেখেন, এক কিলার তার নিজের সর্ম্পকে এভাবে বর্ণনা দিচ্ছে :-
“আমাকে তুমি স্ল্যাট নামে ডাকতে পারো। আমি তোমার শত্রুকে প্রফেশনাল ওয়েতে শেষ করে দিতে পারবো। আমি তার সাথে তোমার সমস্যা জানত আগ্রহী নই। তুমি শুধু আমাকে টাকা দিবে আর আমি তাকে শেষ করে দিব। টার্গেটের বয়স কমপক্ষে ১৮ হতে হবে, টার্গেট পুরুষ না মেয়ে তাতে আমার কিছু আসে যায় না। তবে আমি গর্ভবতী মহিলাকে টার্গেট হিসেবে নেই না। আমি টার্গেটকে অত্যাচার করি না। টার্গেট যদি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব অথবা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য হন তাহলে বাড়তি চার্জ লাগবে। আর বাড়তি চার্জের বিনিময়ে আমি পুরো ঘটনাকে আত্মহত্যা বা দুর্ঘটনার মত করে সাজাতে পারবো। ডাউনপেমেন্টের চার সপ্তাহের মধ্যে কাজ হয়ে যাবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের টার্গেটের জন্য বাড়তি ৫০০০ ডলার ট্রাভেল চার্জ লাগবে। কাজ হয়ে গেলে আমি তোমাকে টার্গেটের ছবি তুলে পাঠাবো।”
ডার্ক ওয়েব কোন ডিজনিল্যান্ড নয়। এটি ইন্টারনেট এর এক বিস্ময়কর অন্ধকার জগৎ। এখানে প্রতিটি পদক্ষেপ ফেলার আগে দুবার ভেবে নিতে হয়। যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করতে একটু ভুল হলেই, হয়ে যেতে পারে বিশাল ক্ষতি। জেনে অবাক হবেন, দৃশ্যমান ওয়েবে যেসব হ্যাকিং কৌশল পাওয়া যায় তা এই ডার্ক ওয়েব থেকে ফাঁস হওয়া মাত্র ১% তথ্যের অংশ বিশেষ। ডার্ক ওয়েব এর হ্যাকাররা খুবই ভয়ংকর এবং প্রোগামিং এ তাদের কোন জুড়ি নেই। সম্পূর্ণ নিরাপত্তা নিয়ে না নামলে বড় ধরণের ক্ষতির মধ্যে পড়তে হয়। কারন ডার্ক ওয়েবের ওয়েবসাইট গুলোতে কোন ধরণের সিকিউরিটি ব্যবহার করা হয়না। এবং হ্যাকাররা নানা ধরণের ভাইরাস দিয়ে রাখে। তাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করার পর তারা নানান ধরণের প্রলোভন দেখিয়ে ভাইরাস ইঞ্জেক্ট করা সফটওয়্যার ইন্সটল করিয়ে ফেলে। ডার্ক ওয়েবের এমনও কিছু ভাইরাস সম্পর্কে খোঁজ পাওয়া যায় যা, পুরো সিস্টেমকে ডেড করে দিতে পারে। তাই ডার্ক ওয়েবে প্রবেশের আগে অবশ্যই ভালোভাবে জেনে নিতে হয় এবং ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। যদি কেও পরখ করার জন্য ডার্ক ওয়েবে প্রবেশ করে, তাহলে তার জন্য প্রথম পরামর্শ হলো অযথা কোন যায়গায় ক্লিক করা যাবে না। কোনো সাইটে রেজিস্ট্রেশন বা লগিন করা যাবে না। ডার্কওয়েব এ প্রবেশ করার জন্য নিরাপত্তা সরঞ্জামগুলো হলো,
- টর ব্রাউজার (Tor browser) :- ডার্ক ওয়েব এর জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক ব্রাউজার হলো, টর ব্রাউজার। এটি ডিজিটাল স্বাক্ষর দ্বারা সুরক্ষিত ব্রাউজার। এই ব্রাউজার একমাত্র স্টাবল ব্রাউজার যা দিয়ে অ্যানোনিমাস (Anonymous) ভাবে ডার্ক ওয়েবে প্রবেশ করা যায়। এটি একটি বিশেষ ধরণের এনক্রিপশন ব্যবহার করে যা ইউজারের তথ্য এনক্রিপ্ট করে। এর ফলে সহজে ইউজারের তথ্য বের করা যায়না।
- টেম্প মেল (Temp mail) :- এটি ফ্রি ডিসপোজেবল ইমেইল অ্যাকাউন্ট তৈরি করার জন্য সফটওয়্যার।
- সার্ফশার্ক ভিপিএন (Surfshark vpn) :- সবচেয়ে অল্পদামের VPN সফটওয়্যার – ৮৩% ছাড়।
ডার্কওয়েব একটি নিষিদ্ধ এলাকা। এখানে অপরাধের সাথে সরাসরি সংযোগ থাকা হয়। লোকমুখে প্রচলিত আছে যে, টর ব্রাউজার ডার্কওয়েবের হ্যাকারদের দ্বারা ই তৈরি এবং এটি ভিজিটর মনিটর করার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এটা সত্য কি মিথ্যা তা নিয়ে দ্বিমত থাকলেও ডার্ক ওয়েবে অ্যাক্সেস করতে গেলে আরও কিছু বাড়তি সুরক্ষা নিতে হয়। সকলের সুবিধার্থে কিছু টিপস হলো :-
- ডার্কওয়েবে প্রবেশের আগে জাভাস্ক্রিপ্ট, ফ্ল্যাশ, শকওয়েভ বন্ধ করে নিতে হবে। কারণ এগুলো খুব সহজেই অ্যানোনিমিটি (Anonymity) ভেস্তে দিতে পারে।
- পেইড প্রক্সি/ ভিপিএন সার্ভিস ব্যবহার করতে হবে।
- ডার্কওয়েবের ওয়েবসাইট যদি কোনোভাবে হ্যাক হয় তাহলে পরিচয় বেরিয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে। কখনো ডার্ক ওয়েবে কোন কাজে আসল ডাটা ব্যবহার করা যাবে না।
তবুও ডার্কওয়েব এ ভিজিট করতে গিয়ে কখনো যদি নিজের তথ্য বা পরিচয় প্রকাশ পেয়ে যায় অর্থাৎ আসল ইমেইল বা আইপি এড্রেস এরকম কিছু প্রকাশ পেয়ে যায় তাহলে বলতেই হয় এটি সাধারণ মানুষটির জন্য মহাবিপদ হয়ে দাঁড়াবে। কারণ ডার্ক ওয়েব এর সিকিউরিটি স্পেশালিষ্ট বা হ্যাকাররা এই তথ্য দিয়ে যা খুশি তা করতে পারবে।
ডার্কওয়েবের বিপজ্জনক কিছু বিষয় হলো :-
- ভাইরাস :- ডার্ক ওয়েবে বিভিন্ন ধরণের ভাইরাস রয়েছে। সুতরাং এখানের ওয়েবসাইটগুলো থেকে কোনো কিছু ডাউনলোড করা যাবে না এবং না বুঝে কিংবা অহেতুক কোথাও ক্লিক করা যাবে না।
- হ্যাকার :- ডার্কওয়েবে অনেক হ্যাকার ফোরাম রয়েছে যেখানে হ্যাকারদের অনেক অনৈতিক কাজ করতে ভাড়া নেয়া যায়। সাধারন ইউজারের এসব হ্যাকার ও হ্যাকার ফোরাম থেকে দূরে থাকা উচিত। কারণ তারা সহজেই ডিভাইস হ্যাক করতে পারে। এবং বলা বাহুল্য, তারা যে কেউ খুব সহজেই সিস্টেম হ্যাক করতে পারে।
- ওয়েবক্যাম হাইজ্যাকিং :- ডার্ক ওয়েবে এমনও ওয়েবসাইট রয়েছে যা, খুব সহজেই ওয়েবক্যাম হাইজ্যাক করতে পারে। এই ওয়েবসাইটগুলো ডিভাইসে “RAT” ইনস্টল করার জন্য রিমোট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন টুল প্রম্পট করবে। এরপর ক্যামেরা লেন্সের মাধ্যমে সমস্ত ক্রিয়াকলাপ পর্যবেক্ষণ করতে পারবে। এজন্য ডার্ক ওয়েব এ ব্রাউজ করার আগে কাগজ বা কাপড় দিয়ে ডিভাইসের ক্যামেরা লেন্সটি ঢেকে নিতে হবে।
ইতিবাচক বা ভালো কাজের জন্য খুব কমই ডার্কওয়েব ব্যবহৃত হয়। অবৈধ সব কাজের জন্যই ডার্কওয়েব বিখ্যাত। ড্রাগ সেল করা, খুনি ভাড়া করা, চাইল্ড পর্নোগ্রাফি, রেডরুম এধরনের কাজগুলো ই ডার্কওয়েব এ সচরাচর দেখা যায়। ডার্কওয়েবের ব্ল্যাক মার্কেটগুলোর ভেতর সবচেয়ে জনপ্রিয় হল Silkroad। ফোর্বসের হিসেব অনুযায়ী, “এখানে গত বছর ২২ মিলিয়ন ডলার বেচা-কেনা হয়েছিলো। আর এখানে প্রচলিত মুদ্রায় বেচাকেনা হয় না, বেচাকেনা হয় ভার্চুয়াল মুদ্রাতে।” উইকিপিডিয়া এর তথ্যমতে, “জানুয়ারি ২০১৫ সাল অব্দি ডার্কওয়েব এর সবথেকে বেশি ওয়েবসাইট হচ্ছে মাদক বেচাকেনার। এরপরে আছে প্রতারণা, বিটকয়েন বেচাকেনা, পর্নোগ্রাফি এধরনের সাইট।” ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পোর্টসমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যারেথ ওয়েনের একটি গবেষণা থেকে পাওয়া যায়, “টর নেটওয়ার্কে সবচাইতে বেশি অনুরোধকৃত বিষয় ছিল শিশু পর্নোগ্রাফি।” সুতরাং বোঝা ই যাচ্ছে, এই জগৎ টির সবচেয়ে বড় অংশ জুড়ে রয়েছে অপরাধ কর্ম। এবং এই জগতে বেশিরভাগ মানুষ প্রবেশ করে অবৈধ সেবাগুলো পেতে। অবৈধ কাজ ও অবৈধ সেবা নেয়ার জায়গা ই হলো এটি। তবে ডার্ক ওয়েবে একজন মানুষ যতক্ষণ না কোনো অবৈধ কাজ করে ততক্ষন পর্যন্ত ডার্ক ওয়েব তার জন্য বৈধ। কিন্তু যদি অপরাধ করে কিংবা কোন অবৈধ কাজ করতে ডার্ক ওয়েব ব্যবহার করে তাহলে সেটা অবশ্যই অবৈধ এবং অপরাধ। ডার্কওয়েব এর সাইট থেকে যে অপরাধ কর্মকাণ্ডগুলো সংগঠিত হয়, সেগুলো হয় আত্মপরিচয় গোপন রেখে। যার ফলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও অসহায় এসকল অপরাধ কর্মকাণ্ড রোধ করতে। সুতরাং সকলের ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতন হতে হবে এবং নৈতিকতা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী হতে হবে। ইন্টারনেট মানব কল্যাণে আবিষ্কার হয়েছে, তাই প্রত্যেকের উচিত এর সঠিক ব্যবহারে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকা। ইন্টারনেটের ভালো দিকগুলো বেছে নিয়ে ও এর উপযুক্ত ব্যবহার করে সকলকে উন্নত ভবিষ্যতের দিকে যেতে হবে।
এই ছিলো ডার্কওয়েব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। যেকোনো প্রশ্ন জাগলে নির্দ্বিধায় কমেন্টবক্সে কমেন্ট করুন। এবং টেকনোলজি সম্পর্কে আরও তথ্য জানতে আমাদের সঙ্গেই থাকুন। সেইসাথে আমাদের অন্যান্য আর্টিকেলগুলোও পড়তে পারেন। ধন্যবাদ।
বিশেষ দ্রষ্টব্য :- এই আর্টিকেলের তথ্য ব্যবহার করে আপনি যদি কোনো প্রকার ক্ষতির সম্মুখীন হোন, তাহলে সেটির দায়ভার সম্পূর্ণ আপনার। আমি মনে করি, সকল মানুষের বিভিন্ন তথ্য জানার স্বাধীনতা রয়েছে। তাই এই আর্টটিকেল প্রকাশ করেছি। সুতরাং যা করবেন নিজ দায়িত্বে করবেন। আমি বা এই আর্টিকেল আপনার কোনো প্রকার ক্ষতির জন্য দায়ী থাকবে না।