১৯৯৭ সালে ইন্টারনেট ব্যবহারকেে আরও সহজ করতে উদ্ভাবন করা হয় ওয়াইফাই (wifi)। ওয়াইফাই ছাড়া বর্তমান সময় যেন একমুহুর্ত কল্পনা করা যায় না। টেলিকম নেটওয়ার্কগুলো ধীরে ধীরে 4G থেকে 5G আপগ্রেডেশনের পথে এগিয়ে চলেছে। ঠিক তেমন করে আপগ্রেডেশনের পথে এগোচ্ছে ওয়াইফাই কানেকশনগুলোও। আমরা আগে ওয়াইফাই সংস্করণের তিন-চার অক্ষরের নাম্বার দেখে বুঝতে পারতাম না কোনটি আগের আর কোনটি পরের আপগ্রেডেশন। তাই বর্তমানে সংখ্যার পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে। যেমন, পুরনো ‘802.11ac’ ওয়াইফাই ভার্সনকে পরিবর্তন করে নামকরণ করা হয়েছে ‘Wi-Fi 5’ হিসেবে। সেই ধারাবাহিকতায় ওয়াইফাই আপগ্রেড এর পুরনো নামকরণও পাল্টানো হয়েছে। সেগুলো হলো :-
- ১৯৯৯ সালে বের হওয়া 802.11b প্রযুক্তিকে উল্লেখ করা হয়েছে WiFi 1 হিসেবে
- ২০০০ সালে বের হওয়া 802.11a প্রযুক্তিকে উল্লেখ করা হয়েছে WiFi 2 হিসেবে
- ২০০৩ সালে বের হওয়া 802.11g প্রযুক্তিকে উল্লেখ করা হয়েছে WiFi 3 হিসেবে
- ২০০৯ সালে বের হওয়া 802.11n প্রযুক্তিকে উল্লেখ করা হয়েছে WiFi 4 হিসেবে
- ২০১৪ সালে বের হওয়া 802.11ac প্রযুক্তিকে উল্লেখ করা হয়েছে WiFi 5 হিসেবে
- এবং 802.11ax প্রযুক্তির নামকরণ করা হয়েছে WiFi 6 হিসেবে
ওয়াইফাই সংস্থার ঘোষণানুসারে, হার্ডওয়্যারের পাশাপাশি বিভিন্ন সফটওয়্যারেও এখন ওয়াইফাইকে এ ধরনের নাম্বার হিসেবে দেখতে পাওয়া যাবে। এতে খুব সহজেই একজন কম্পিউটার, ল্যাপটপ কিংবা স্মার্টফোন ব্যবহারকারী বুঝতে পারবেন কোন ওয়াইফাই নেটওয়ার্কটি নতুন ও দ্রুতগতির।
বর্তমানে আমরা যে ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করি সেটার ভার্সন হচ্ছে WiFi 5 এবং এটার স্পিড ম্যাক্সিমাম 3.5 Gb (bit per second not byte)। WiFi 6 (802.11ax) হলো WiFi 5 (802.11ac) এর আপগ্রেডেড ভার্সন। এই নেটওয়ার্ক এর ক্যাপাসিটি WiFi 5-এর চেয়ে কমপক্ষে ৪ গুণ বেশি। সেই সাথে এটি ইউজারদের অত্যন্ত দ্রুত স্পিড দিবে। একাধিক ডিভাইসে কানেক্ট করলেও ওয়াইফাই খুব ভালো ভাবে কাজ করবে এবং এটির স্পিডও খুব দ্রুত হবে। শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইন্টেল জানিয়েছে, “নতুন এই ওয়াইফাই প্রযুক্তির মাধ্যমে জনাকীর্ণ এলাকায় প্রত্যেক ব্যবহারকারী আগের তুলনায় ৪ গুন বেশি গতি পাবে।” সুতরাং বলাই যায়, বরাবরের মতো এবারও নতুন ওয়াইফাই ভার্সনটিতে থাকছে পূর্বের তুলনায় দ্রুত ডাটা ট্রান্সফার স্পিড। পূর্বের তুলনায় আরো কার্যকর ডাটা এনকোডিং টেকনোলজি যার ফলে ওয়াইফাই ৬ উচ্চগতি দিতে সক্ষম হবে। নতুন এই ওয়াইফাই ৬ প্রযুক্তির ফলে পুরনো ২.৪ গিগাহার্টজ নেটওয়ার্কেও বেশি গতি পাওয়া যাবে। ওয়াইফাই ৬ এর আকর্ষণীয় দিক হলো, যখন এটি কোনও ডিভাইসে সংযুক্ত করা হবে, তখন ওয়াইফাই ৫ এর তুলনায় ৪০% বেশি স্পিড দিবে।
দশম জেনারেশন Intel চিপসেট-যুক্ত ল্যাপটপ WiFi 6 সাপোর্ট করে। যে ল্যাপটপে Intel-এর Gig+ টেকনোলজি রয়েছে সেখানে, ইন্টারনেট স্পিড WiFi 6 রাউটারের সঙ্গে দ্বিগুণ হয়ে যাবে। এছাড়া Galaxy S10, Note 10, iPhone 11 ইত্যাদি ডিভাইস WiFi 6 সাপোর্ট করে। কিছুদিনের মধ্যে আরও অন্যান্য প্রায় সব ডিভাইসেই সাপোর্ট করবে WiFi 6।
ওয়াইফাই ৬ এর ফিচার
ওয়াইফাই ৬ দারুণ সব সেবা আনছে আমাদের জন্য। সেগুলো হলো :-
– আগের তুলনায় অনেক বেশি স্পিড
– হাই লেভেল সিকিউরিটি
– বাফারিং ছাড়াই মাল্টি ইউজার এক্সপেরিয়েন্স
– শক্তিশালী এনক্রিপশন প্রযুক্তি
বর্তমান ওয়াইফাই ৫ এর স্পিড হচ্ছে 3.5 GB আর ওয়াইফাই ৬ এর আপডেটেড স্পিড 9.6 GB পর্যন্ত স্পিড দিতে সক্ষম। ওয়াইফাই ৬ অফিশিয়াল রিলিজে বলা হয়েছে, এটির সবচেয়ে মূল বিষয় হচ্ছে সিকিউরিটি। কারণ, WiFi 5 এর সিকিউরিটি সিস্টেম বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে অত্যন্ত দুর্বল। সামান্য এন্ড্রোয়েড এপ দিয়েও এই ওয়াইফাই ৫ এর WPA সিকিউরিটি ব্রেক করা যায়। যার কারণে বর্তমানে সাধারণ ব্যক্তিরাও হ্যাক ও হ্যাকিং করতে পারে। ওয়াইফাই ৬ এসব ঝামেলাকে বিদায় দিয়ে নতুন সিকিউরিটি এনেছে সেটি হলো WPA 3। অন্যদিকে ওয়াইফাই ৬ এ আছে নতুন এনক্রিপশন সিস্টেম যেটা সব তথ্যকে এনক্রিপ্ট করে তারপর সেন্ড হবে। অর্থাৎ, টোটালি সিকিউরড। ওয়াইফাই ৬ বাফারিং ছাড়া মাল্টি ইউজার এক্সপেরিয়েন্স দিতে সক্ষম। আমরা সাধারণত ওয়াইফাই নেটয়ার্কে বেশ অনেকজন মিলে কাজ করি। আর সেসময় কেউ একজন যদি ভিডিও স্ট্রিমিং করতে থাকে তাহলে অন্যদের ব্রাউজ করায় কষ্ট হয়ে যায়। আর ভিডিং চ্যাটিং এর সময় বাফারিং তো আছেই। কিন্তু, ওয়াইফাই ৬ এসব ঝামেলা দূর করে দেবে। ওয়াইফাই ৬ এ একই নেটওয়ার্ক এর আওতায় আমরা মাল্টি ইউজার অনলাইন গেমিং, ভিডিও স্ট্রিমিং, ভিডিও চ্যাট সহ আরও অনেক কাজ একসঙ্গে করতে পারবো। গতির সাথে সাথে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোতে আরো ভালোভাবে কাজ করতে পারবে ওয়াইফাই ৬ প্রযুক্তি। নতুন এই ওয়াইফাই ৬ প্রযুক্তিতে থাকছে ‘Target Wake Time’ (TWT) নামে নতুন একটি ফিচার। আর এর ফলে স্মার্টফোন, ল্যাপটপ সহ বিভিন্ন ওয়াইফাই যুক্ত ডিভাইসগুলোতে পাওয়া যাবে পূর্বের তুলনায় বেশি ব্যাটারি ব্যাকআপ। যখন কোনো ডিভাইস কোনো ওয়াইফাই নেটওয়ার্কে যুক্ত হবে, তখন ডিভাইসটিতে কখন ডাটা আদান-প্রদান হবে আর কখন হবে না, সেটির তথ্য নেটওয়ার্ক ডিভাইসটিকে দেবে। ফলে ডিভাইসটি বুঝতে পারবে, কখন তাকে ডাটা নিতে হবে আর কখন তাকে ডাটা নেয়া বন্ধ করতে হবে। এর ফলে মোট ব্যাটারি খরচ কমে আসবে। ফলে ডিভাইসে চার্জ বেশি থাকবে।
ইতিমধ্যেই মার্কেটে এমনসব প্রোডাক্ট চলে এসেছে, যেগুলো ওয়াইফাই ৬ সাপোর্টেড। এই ওয়াইফাই ৬ অর্থাৎ WiFi -এর নতুন সংস্করণ সম্পর্কে অনেকেরই ধারণা কম। অনেকেরই ভ্রান্ত ধারণা, ওয়াফাই ৬ এখনই আপগ্রেড করা ঠিক হবে না। কারণ হিসেবে মনে করছেন এর উপযোগী প্রোডাক্ট বাজারে নেই। কিন্তু এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। ইতিমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে, ভবিষ্যতের ডিভাইসগুলোতে ‘WiFi 6 Certified’ লোগো থাকবে। ফলে খুব সহজেই বোঝা যাবে এটি ওয়াফাই ৬ প্রযুক্তি যুক্ত। পূর্বের ডিভাইসগুলোতে শুধু ‘WiFi Certified’ লোগো থাকতো, যা দেখে বোঝা যেত না যে এতে কোন ভার্সনের ওয়াইফাই প্রযুক্তি ব্যবহার করা যাবে। তাই এই লোগোর মাধ্যমে খুব সহজে আমরা সবাই চিহ্নিত করতে সক্ষম হবো।
ওয়াইফাই ৬ সব ধরনের টেস্ট সম্পন্ন করে ফেলেছে। আর বর্তমানে ওয়াইফাই ৬ সিগন্যাল গ্রহণে সক্ষম এমন ডিভাইস ও উৎপাদন শুরু হয়েছে। তাই আর চিন্তার কোনো কারণ ই নেই। যদিও ওয়াইফাই ৬ ও এর ডিভাইস বাংলাদেশে আসবে বেশ দেরিতে। অন্যান্য বড় দেশগুলোতে ইতিমধ্যে ওয়াইফাই ৬ ও ওয়াফাই ৬ প্রযুক্তিযুক্ত ডিভাইস ব্যবহার শুরু হয়ে গিয়েছে। এই ছিলো ওয়াইফাই ৬ (WiFi 6) সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। যেকোনো প্রশ্ন জাগলে নির্দ্বিধায় কমেন্টবক্সে কমেন্ট করুন। এবং টেকনোলজি সম্পর্কে আরও তথ্য জানতে আমাদের সঙ্গেই থাকুন। সেইসাথে আমাদের অন্যান্য আর্টিকেলগুলোও পড়তে পারেন। ধন্যবাদ।