“ভিশন” শব্দের অর্থ হলো, কাল্পনিক বিষয় বা রূপকল্প। সহজ ভাষায়, লক্ষ্য অর্জনের জন্য পদক্ষেপ পরিকল্পনা। আমাদের আজকের বিষয়, বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জনের পথ “ভিশন – ২০৪১”, এছাড়াও এটিকে বলা যায়, ” মিশন – ২০৪১”। স্বপ্নপূরণের এই পথটি শুধু রূপকল্প নয়, বাংলাদেশের জন্য মিশনও বটে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ধীরে ধীরে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়ার গল্প দিয়ে শুরু করা যাক আজকের বিষয়।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ উন্নতির জন্য প্রথম পদক্ষেপ নেন। ১৯৭২ সালের ৩১ জানুয়ারিতে তার গঠিত পরিকল্পনা কমিশন কমিটির মূল উদ্দেশ্য ছিলো “যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ” এর পুনর্গঠন। সে বছর বাংলাদেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা “১৯৭৩ – ১৯৭৮” প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর দেশি-বিদেশি, স্বাধীনতাবিরোধী চক্র, সামরিক বেসামরিক, মধ্যবর্তী, তত্ত্বাবধায়ক ও তথাকথিত গণতান্ত্রিক নানা ব্যবস্থায় দেশ পরিচালনার কারণে বাংলাদেশে আর কোনো পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়নি এবং পূর্বের পদক্ষেপও মাঝপথে থেমে যায়। এরপর ১৯৯৬ সালে অর্থাৎ দীর্ঘ ২১ বছর পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর উপযুক্ত কন্যা শেখ হাসিনা নেতৃত্বে আসেন। এবং তিনি পরিকল্পনা প্রণয়নের চিন্তা শুরু করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, তখনও বিপত্তি বাঁধে। এমনকি তার জীবনও বারবার হুমকির সম্মুখীন হয়। ১৯৯৮ – ২০০০ সালে যখন তিনি রূপকল্প নিয়ে এগোতে শুরু করেন ঠিক তখনই দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা সুকৌশলে তাকে পরাজিত করেন। ২০০১ সালে সরকার বদল হয়। এই পরাজয়ে মূলত বঞ্চিত হয় দেশের উন্নতি ও দেশের মানুষ। এরপর আবার আসে সুসময়। ২০০৮ সালে নেতৃত্বে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে বছর “ভিশন – ২০২১” এর ধারণাটি প্রথম উপস্থাপন করেন তিনি। “ভিশন – ২০২১” এর দু’টি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা করা হয়, সেগুলো হলো (২০১১ – ২০১৫), (২০১৬ – ২০২০)। এই পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য ছিলো, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা হবে। এছাড়াও পরিকল্পনায় আরও যুক্ত ছিলো দারিদ্রতা দূর করা হবে, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠন হবে, নারী ক্ষমতায়ন ও সমান অধিকার হবে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও দেশের উন্নয়ন হবে। এবং “ভিশন – ২০২১” এর সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিলো ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠিত হবে। অর্থাৎ কম্পিউটারের ব্যপক ব্যবহার হবে এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চাকরি, দারিদ্র্য বিমোচনের বাস্তবায়নে প্রযুক্তির ব্যবহার হবে। অতঃপর ভিশন – ২০২১ এর লক্ষ্য অনুযায়ী অনেকাংশে সফল হয় বাংলাদেশ। যেমন, এমডিজির অন্যতম প্রধান লক্ষ্য, দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যটি অর্জিত হয়। দারিদ্র্যের হার ২৯ শতাংশে নামানোর লক্ষ্য নির্ধারিত হয়েছিলো, বাংলাদেশ দারিদ্র্যের হার ২৪.৮ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়। ৭ শতাংশ হারে গড় জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়। এমডিজির আরেক প্রতিবেদন অনুযায়ী লক্ষ্য ছিলো, প্রাথমিক শিক্ষায় শতভাগ নিবন্ধন হবে, বাংলাদেশে ৯৮ শতাংশ নিবন্ধন হয়। এছাড়া লিঙ্গবৈষম্য, শিশুমৃত্যু, মাতৃস্বাস্থ্য এসব মূল লক্ষ্যের বেশির ভাগ উপসূচকই লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হয়। সেইসাথে বাড়ে মানুষের মাথাপিছু আয়। যার ফলে, বিশ্বব্যাংকের মূল্যায়নে বাংলাদেশের অবস্থান হয়, নিম্ন মাধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে। পূর্বে বাংলাদেশের অবস্থান ছিলো নিম্ন আয়ের দেশ এর তালিকায়। এছাড়া মেগা প্রোজেক্ট পদ্মাসেতু নির্মাণ সম্পন্ন হয়। অন্য আরও মেগা প্রোজেক্ট নির্মাণ চলমান অবস্থায় রয়েছে, যেমন মেট্রোরেল। এমনকি তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ও অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে বাংলাদেশ। এসকল অর্জন ও সাফল্য বাংলাদেশ এর জন্য অবিস্মরণীয় স্মৃতি।
এভাবে খুব দ্রুত ও বেশ সফলভাবে “ভিশন – ২০২১” বাস্তবায়ন করতে পারে বাংলাদেশ। এরপর ই পরবর্তী লক্ষ্য “ভিশন – ২০৪১” হাতে নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০২১ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে এ তথ্য জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন, “তারুণ্যের অদম্য শক্তিতে সময়ের সাথে সাথে আরো প্রাণবন্ত ও সমৃদ্ধ হয়ে উঠছে বাংলাদেশ। আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতিগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পেরেছি, কিন্তু এটি আমাদের দায়বদ্ধতাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা “ভিশন – ২০২১” বাস্তবায়ন করেছি, পদ্মাসেতুর মতো একটি অনন্যসাধারণ প্রকৌশলী নির্মাণশৈলী উপহার দিয়েছি জাতিকে। এসব কারণে ইতিহাসের একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হিসেবে বিজয়ের ৫০ তম বার্ষিকী উদযাপন করতে সমর্থ হয়েছি আমরা। এখন আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য, “ভিশন – ২০৪১” বাস্তবায়নের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা। এই ৫০ এ, আমি আমার সমবয়সী প্রিয় বাংলাদেশের মতো নিজের সুবর্ণজয়ন্তীও উদযাপন করছি। কারণ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আমার জন্ম হয়, আমার নাম রাখা হয়েছিল জয়। এর কিছুদিনের মধ্যেই যুদ্ধে চূড়ান্ত জয় লাভের মাধ্যমে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে জন্ম নেয় বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এবং আমার জীবনের পথযাত্রা সমান ও সমান্তরাল, এই ভালোবাসার বন্ধন অবিচ্ছেদ্য। স্বাধীনতার এই সুবর্ণজয়ন্তীতে এসে, আমরা এমন একটা জায়গায় পৌঁছে গেছি যেখান থেকে আরো উন্নতি করার সুযোগ রয়েছে আমাদের। এখনই সময় নিজেদের বিকশিত করার মাধ্যমে মাথা উঁচু করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার। দেশকে আরো একধাপ এগিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে আমরা আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান জানাতে পারি। যাদের মহান আত্মদানের মাধ্যমে ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে উদিত হয়েছে স্বাধীনতার সূর্য। আমাদের সেই পূর্বপুরুষদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ করার উপযুক্ত সময় এখনই। ভুলে গেলে চলবে না, আমরা একটা ফুলের জন্য যুদ্ধ করেছি, একটি মুখের হাসির জন্য যুদ্ধ করেছি। স্বাধীনতা বিরোধী কুচক্রীরা যাতে এই ফুলকে নষ্ট করতে না পারে, কারো মুখের হাসি কেড়ে নিতে না পারে, সেজন্য আমাদের সবাইকে একতাবদ্ধ থাকতে হবে। আসুন, সবাই মিলে স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলি। বিশ্বের বুকে মর্যাদাবান রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করি। “ভিশন – ২০৪১” আপনাদের জন্য ই। সবাইকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।”
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক সভায় বলেন, “২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষণা দিয়েছিলাম ‘দিন বদলের সনদ’। আজ বাংলাদেশের মানুষের জীবনমান পরিবর্তন হচ্ছে, উন্নত হচ্ছে। আমরা দিন বদলের যাত্রা শুরু করেছি এবং তা এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের দুভার্গ্য, স্বাধীনতা বিরোধী চক্র যারা মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণের বিজয় অর্জনকে মেনে নিতে পারেনি, তাদের চক্রান্তের ফলে ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট রাতে জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ২১ বছর আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন শুরু হয়।” এরপর তিনি আরও বলেন, “জাতির পিতা যে স্বপ্ন নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিলেন, সেই স্বপ্ন পুরণ করা, বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোঁটানো, মানুষের জীবনমান উন্নত করা, বাংলার মানুষকে একটি উন্নত জীবন দান করা, এসব লক্ষ্য নিয়েই আমরা ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত কাজ করেছি। তখন দেশের মানুষ ১৯৭৫ সালের পর প্রথম উপলব্ধি করে সরকার জনগণের সেবক, সরকার জনগণের সেবা করে। এরপর ২০০৮ সাল থেকে দেশের ও জনগনের জন্য কাজ শুরু করতে পারি। যার ফলে বর্তমানে বাংলাদেশ সারাবিশ্বের মাঝে মর্যাদা পেয়েছে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এই অর্জনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, এটাই আমাদের লক্ষ্য। দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা, যেটা জাতির পিতার স্বপ্ন ছিলো, সেই স্বপ্ন পূরণ করা ই আমাদের মূল লক্ষ্য। এই লক্ষ্য নিয়েই দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছি, কাজ করে যাচ্ছি। এবং এর ই কিছু ফলাফল, আপনাদের উপহার দিতে পারছি।”
ভিশন – ২০৪১
“ভিশন – ২০৪১” দুই দশক ব্যাপী একটি মহা পরিকল্পিত পরিকল্পনা। এটির বাস্তবায়নে মোট চারটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা থাকবে। (২০২২ – ২০২৬), (২০২৭ – ২০৩১), (২০৩২ – ২০৩৬), (২০৩৭ – ২০৪১)। ২০ বছর মেয়াদি সুদূরপ্রসারী এই স্বপ্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রদত্ত এবং জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিল কর্তৃক প্রণীত জাতীয় কৌশলগত পরিকল্পনা। ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত দেশের কাতারে সামিল করার লক্ষ্যে “ভিশন – ২০৪১” এর রূপরেখা অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এই “ভিশন – ২০৪১” এর দলিলটিতে ধারাবাহিকভাবে দেশের উন্নয়ন ও পরিবর্তনের বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে। পরিকল্পনার লক্ষ্য ও কর্মপরিকল্পনা বিবরণ করা হয়েছে মোট ১২টি অধ্যায়ে। “ভিশন – ২০৪১” এর বিস্তারিত পরিকল্পনা নিচের পিডিএফ ফাইলটিতে দেয়া হলো। (পিডিএফ সংগৃহীত)
পরিকল্পনা দলিলটির ভিত্তিমূলে রয়েছে, “বাংলাদেশ হবে সোনার বাংলা” – যেখানে দারিদ্র্য হবে সুদূর অতীতের ঘটনা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর আজন্ম লালিত স্বপ্ন দারিদ্র্য, ক্ষুধামুক্ত, দুর্নীতি ও শোষণহীন সমৃদ্ধ এক বাংলাদেশ। এবং এই পরিকল্পনার পথ ধরে তার স্বপ্নটি পাবে পূর্ণতা। এছাড়াও প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি ও সুশাসন নিশ্চিতকরণ করা হবে। রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গুণগত মান উন্নত করা হবে। বিচারব্যবস্থায় স্বাধীনভাবে, সততা ও দক্ষতা’র সঙ্গে দায়িত্ব পালন করা হবে। মূলত গণতন্ত্রায়ন এবং সুশাসন নিশ্চিত করার উপর ই “ভিশন – ২০৪১” এর বাস্তবায়ন অনেকাংশে নির্ভরশীল।
“ভিশন – ২০৪১” এর কিছু লক্ষ্যের বিবরণ আলোচনা করা যাক। ২০৩১ সালের বাংলাদেশ হবে একটি উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ। মাথাপিছু আয় হবে ৩২৭১ ডলার আর ২০৪১ সালে মাথাপিছু আয় হবে নুন্যতম ১২৫০০ ডলার। চরম দরিদ্র লোক, যাদের দৈনিক আয় ২.১৬ ডলারের কম এমন লোকের সংখ্যা কমিয়ে আনা হবে ০.৬৮ শতাংশে। ২০৪১ সালের মধ্যে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা হবে ৯.৯ শতাংশ। বিনিয়োগ দাঁড়াবে ৪৬.৯ শতাংশ এবং রাজস্ব আদায়ের হার দাঁড়াবে ২৪.১ শতাংশ। এফডিআর ৩ শতাংশ, সরকারি বিনিয়োগ ৮.৯ শতাংশ এবং বেসরকারি বিনিয়োগ ৩৮ শতাংশ হবে। জাতীয় সঞ্চয় ৪৬.৭ শতাংশ, দেশজ সঞ্চয় ৪২.৭ শতাংশ, মূল্যস্ফীতি ৪.৪ শতাংশ হবে। এবং ২০৪১ সালে ৫০ শতাংশ উন্নতি হবে ডিজিটাল প্রযুক্তি নির্ভর ও শ্রমবাজার হবে দক্ষতানির্ভর। সমাজের আয় বৈষম্য কমানোর লক্ষ্যে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য ঋণবাজারের উন্নয়ন, সম্পদের সুষম বণ্টন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বৃদ্ধিকরণ করা হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী দু দশকে আরও পরিবর্তন আসবে কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবহন, যোগাযোগ ব্যবস্থা, ব্যবসার ধরন এবং কর্মসম্পাদন খাতে। সেইসাথে রপ্তানিমুখী শিল্পায়ন, কৃষির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, নগরের বিস্তার, দক্ষ জ্বালানি ও অবকাঠামো, দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা হবে। ২০৪১ সালে বিনিয়োগের পরিমাণ হবে জিডিপির ৪৬.৮৮ শতাংশ, যা বর্তমানে ৩২.৭৬ শতাংশ। রপ্তানি আয় ৫০ বিলিয়ন ডলার থেকে বাড়িয়ে ৩০০ বিলিয়ন ডলার করা হবে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতেও অর্জিত হবে সাফল্য। ২০১০ সালে বাংলাদেশে ৫৮২৩ মেগাওয়াট উৎপাদন হতো, “ভিশন – ২০২১” এর প্রকল্পে ২০১৯ সালে এটি বেড়ে দাঁড়ায় ১৮৯৬১ মেগাওয়াট। এবং “ভিশন – ২০৪১” এর প্রকল্পে বাংলাদেশের বিদ্যুত উৎপাদন হবে ৫১০০০ মেগাওয়াট। এছাড়াও বিদ্যুৎ খাতে যুক্ত হবে পারমাণবিক প্রযুক্তি। ২০৪১ সালে জ্বালানি বিন্যাস হবে ৩৫ শতাংশ গ্যাস, ৩৫ শতাংশ কয়লা, ১২ শতাংশ পারমাণবিক, ১ শতাংশ তরল তেল এবং ১ শতাংশ জলীয়, বাকি ১৬ শতাংশ আমদানি করা হবে। ইউএনডিপির ২০১৯ সালের প্রতিবেদন মোতাবেক, ‘মানবসম্পদ উন্নয়ন’ সূচকে ০.৬১৪ স্কোর নিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান হয়েছিলো ১৩৫তম। “ভিশন – ২০৪১” এ এই সূচকের উত্তরণ ঘটানো অত্যাবশ্যক লক্ষ্য। মানসম্মত শিক্ষার মাধ্যমে মানব উন্নয়ন এবং জনমিতিক লভ্যাংশ আহরণ করা হবে। সর্বজনীন স্বাস্থ্য পরিচর্যা, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসার বৃদ্ধিকরণ করা হবে। বর্তমানের ‘নাগরিকের আইসিটি অভিগম্যতা’ এর স্কোর ৩৫.৭ থেকে বাড়িয়ে ২০৪১ সাল নাগাদ ৮৫ তে উন্নতি করা হবে। এবং এর মাধ্যমে সারাবিশ্বে ২০ তম স্থান অর্জন করা সম্ভব হবে। এছাড়াও নগর যোগাযোগ ব্যবস্থায় এমআরটি ও মেট্রোরেলের সংযোগ, প্রতিটি রেললাইন ব্রডগেজ সিস্টেমে উন্নীতকরণ ও আধুনিক ট্রাফিক সিগন্যাল স্থাপন করা হবে।মহাসড়ক করিডোরের বর্তমানের গড় গতি ২৫-৩০ কিমি/ঘণ্টা, এটিকে ৮০-১০০ কিমি/ঘণ্টায় উন্নীতকরণ করা হবে। জাহাজের ‘নোঙর দিবস’, ‘গ্যাংশিফট’-এর উন্নয়ন, ড্রেজিং, নাব্যতা উন্নতি, নদীশাসন ও বাঁধ নির্মাণ করা হবে। সেইসাথে বিমানবন্দরে অতিরিক্ত রানওয়ে ও ট্যাক্সিওয়ে স্থাপন করা হবে।
এমন সব আরও অনেক পরিকল্পনার হিসাব নিকাশ ও লক্ষ্য যাত্রা সামনে রেখে “ভিশন – ২০৪১” এর দলিল অনুমোদন পেয়েছে পরিকল্পনা কমিটির চেয়ারপারসন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র হাতে। দলিলটিতে দারিদ্র্য নিরসন, আয় বৈষম্য হ্রাস, নতুন কর্মসংস্থান গঠন, রপ্তানি বহুমুখীকরণ, বৈদেশিক বাণিজ্য ও লেনদেনে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা, টেকসই বিদ্যুত ও জ্বালানি ব্যবস্থাপনা, টেকসই উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা সহ আরও অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। প্রাথমিকভাবে দৃশ্যমান এ সকল প্রত্যাশা, পরিকল্পনাগুলো মনে হতে পারে খুবই আশাব্যঞ্জক। কিন্তু “ভিশন – ২০৪১” নিঃসন্দেহে একটি সুপরিকল্পিত, উচ্চাভিলাষী উন্নয়ন দলিল। তবুও যদি কারো চোখে অসঙ্গতি ধরা পড়ে তাহলে এটির সমালোচনা না করে বরং আমাদের পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন দেখে আত্মবিশ্বাসী হওয়া উচিত। জনগণের আশা “ভিশন – ২০৪১” সফল হোক, বাংলাদেশের নাম উন্নত দেশের তালিকায় স্থান পাক সেইসাথে “ভিশন – ২০৪১” এর পরিকল্পিত নকশার পথ ধরে ২০৪১ সালের মধ্যে স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা হোক, এটাই আমরা কামনা করি।
এই ছিলো ভিশন – ২০৪১ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। যেকোনো প্রশ্ন জাগলে নির্দ্বিধায় কমেন্টবক্সে কমেন্ট করুন। সেইসাথে আমাদের অন্যান্য আর্টিকেলগুলোও পড়তে পারেন। ধন্যবাদ।