পাইথন পরিচিতি

মানুষজাতির একে অপরের সাথে মনের ভাব প্রকাশ করার একমাত্র মাধ্যম হলো ভাষা। এজন্য সারা পৃথিবীতে অনেক ভাষা রয়েছে, যেমন:- ইংরেজি, বাংলা, উর্দু, হিন্দি, ফারসি, তেলেগু ইত্যাদি। এই সব ভাষাগুলোর মাধ্যমে মানুষ একে অপরের সাথে মনের ভাব প্রকাশ করতে সক্ষম হয়। কিন্তু এই ভাষার মাধ্যেমে মানুষ ও যন্ত্রের মাঝে ভাব প্রকাশ করা সম্ভব নয়। কারণ বোকা কম্পিউটার শুধু বাইনারি ভাষা বোঝতে সক্ষম। যা শুধু ০, ১ দিয়ে লিখা হয়। এজন্য মেশিন/ কম্পিউটার বুঝতে পারে আবার মানুষের জন্যও বোঝা সহজলভ্য হয় এমনসব ভাষার সৃষ্টি হয়, যেগুলোকে বলা হয় প্রোগ্রামিং ভাষা। যেমন:- Python, C, C++, PHP, Java, Ruby ইত্যাদি। পৃথিবীতে প্রোগ্রামিং ভাষা অনেক রয়েছে এবং নিত্যনতুন তৈরিও হচ্ছে। তন্মধ্যে কিছু ভাষা জায়গা করে নিতে পারে প্রোগ্রামারদের কাছে।

সাধারনত প্রোগ্রামিং ভাষা দুই ধরনের হয়ে থাকে। কম্পাইলড ল্যাঙ্গুয়েজ (Compiled language) এবং ইন্টারপ্রেটেড ল্যাঙ্গুয়েজ (Interpreted language)। কম্পাইলড ল্যাঙ্গুয়েজে পুরো সোর্স কোড কম্পাইল শেষে এক্সিকিউট হয় (যেমন- সি) এবং ইন্টারপ্রেটেড ল্যাঙ্গুয়েজে একটি একটি করে লাইন এক্সিকিউট হয় (যেমন- পাইথন)। ইন্টারপ্রেটেড প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ মানুষের জন্য সহজ ও বোধগম্য। কম্পাইলড ল্যাঙ্গুয়েজ, যেমন সি বা সি++ এ কোড রান করার সময় কম্পাইলার পুরো কোড পড়ে, তারপর সেটিকে কম্পাইল করে। ফলে কোডের কোনো অংশে সামান্য একটু ভুল হলেই পুরো কোড অচল হয়ে যায় এবং কাজ করে না। অন্যদিকে, পাইথন একেবারেই আলাদা। পাইথন ইন্টারপ্রিটার লাইন-বাই-লাইন কোড পড়ে আর ইন্টারপ্রিট করে। আর যেখান থেকে ভুল শুরু হয় কেবল সেখান থেকেই কোড আউটপুট অচল হয়ে পড়ে। ইন্টারপ্রিট অর্থ হলো অনুবাদ করা। পাইথন ইন্টারপ্রিটার কোডকে অনুবাদ করে কম্পিউটারের জন্য। আগেই বলেছি, কম্পিউটার ০ ও ১ বাদে কিছু বোঝে না। তাই আমরা যা লেখি, ইন্টারপ্রিটার সেটিকে ০ ও ১ এর কম্বিনেশনে অনুবাদ করে কম্পিউটারকে বোঝায় আমরা তাকে আসলে কী করতে বলছি। প্রোগ্রামিং মানে হলো কম্পিউটারকে নির্দেশ দেওয়া। পাইথনের কল্যাণে সে কাজ হয়ে গিয়েছে খুবই সহজ। এজন্য পাইথন অনেক জনপ্রিয়তাও লাভ করেছে। এছাড়াও পাইথন হাই লেভেল, পোর্টেবল, ইন্টারপ্রিটেড, ইন্টারেক্টিভ ও অবজেক্ট অরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ এবং এটি একটি ডায়নামিক ল্যাঙ্গুয়েজও। সি, সি++, জাভা এগুলো সবই স্ট্যাটিক ল্যাঙ্গুয়েজ। এবং এদের ক্ষেত্রে প্রোগ্রামারকে প্রতিটি ভেরিয়েবলের ডাটা টাইপ বলে দিতে হয়। পাইথনের ক্ষেত্রে এই ঝামেলা নেই। পাইথন নিজ থেকেই ডাটা টাইপ বুঝে নেয়। পাইথনের সেলফ মেমোরি ম্যানেজমেন্ট একে করে তুলেছে আরও অনন্য। আর তার পাশাপাশি হাইলি রিডেবল হওয়ায় পাইথন ল্যাঙ্গুয়েজ প্রোগ্রামারদের কাছে হয়ে উঠেছে সবচেয়ে পছন্দের ল্যাঙ্গুয়েজ। জার্নিক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কার্ট ফিন্স বলেন, “হিসাব করে দেখলাম যে পাইথন আমাদের প্রোগ্রামারদের জাভা প্রোগ্রামারদের চেয়ে ১০ গুণ বেশি এবং সি প্রোগ্রামারদের চেয়ে ১০০ গুণ বেশি কর্মক্ষম করে তুলেছে।” পাইথন একটি হাই লেভেল প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ হওয়ায় এটি প্রচুর সংখ্যক মানুষরা ব্যবহার করছে। প্রতিটি প্রোগ্রামিং ভাষার নিজস্ব রূপ, ভঙ্গিতে সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু একটি ভাষা যখন বিভিন্ন রূপে কোনো সমস্যা সমাধান করতে পারে তখন সেটি সবার মাঝে আলাদা জায়গা করে নেয়, যেমন ক্লাস টপারের মতো। পাইথন হলো এমনই একটি ভাষা। বিশ্বজুড়ে পাইথন ল্যাঙ্গুয়েজের চাহিদা দিন দিন শুধু বাড়ছে। বর্তমানে সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন ও জনপ্রিয় ল্যাঙ্গুয়েজ হলো পাইথন।

পাইথন একটি মাল্টিপ্যারাডিজম প্রোগ্রামিং ভাষা যা একই সাথে অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড ও স্ট্রাকচার্ড ফিচার সাপোর্ট করে। পাইথনে স্ট্রাকচার্ড প্রোগ্রামিং এবং অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং করা যায়। এ ছাড়া ফাংশনাল প্রোগ্রামিংও করা যায় পাইথন দিয়ে। প্রোগ্রামিং দুনিয়াতে পাইথন ল্যাঙ্গুয়েজ বিশাল জায়গা জুড়ে রয়েছে। সহজ এবং সম্পুর্ণ একটি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ হচ্ছে পাইথন। Large Scale প্রজেক্ট এর জন্যও পাইথন সেরা একটি ল্যাঙ্গুয়েজ। পাইথন দিয়ে একই সাথে ডেস্কটপ সফটওয়ার, মোবাইল অ্যাপ, ওয়েবসাইট এবং গেম ডেভেলপমেন্ট করা যায়। এমনকি ডাইনামিক ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনসহ অনেক কিছু তৈরিতে পাইথন প্রোগ্রামিং ভাষা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। মেশিন লার্নিং, ডাটা সাইন্স এরও শীর্ষ স্থানে রয়েছে এই পাইথন ল্যাঙ্গুয়েজ। সহজ ভাষায়, একের ভিতর সব এই ল্যাঙ্গুয়েজটি। ইউটিউব, মোজিলা, ডিজনি সহ বড় বড় অনেক প্রোজেক্টে পাইথন ব্যবহার করা হয়েছে। বিশ্ববিখ্যাত প্রতিষ্ঠান গুগলের তিনটি আনুষ্ঠানিক প্রোগ্রামিং ভাষার একটি হচ্ছে পাইথন। ফাইল হোস্টিং সাইট ড্রপবক্স পাইথন ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করে। ড্রপবক্সের ডেক্সটপ ক্লায়েন্টও পাইথনে তৈরি। এমনকি ফেসবুকেও রয়েছে পাইথনের ব্যবহার। শুধু তাই নয়, ইন্সটাগ্রাম এর পুরো সিস্টেম পাইথন ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। ইউটিউবের সফটওয়্যার আর্কিটেক্ট কুয়ং দো বলেন, “পাইথন আমাদের সাইটের জন্য যথেষ্ট গতিময়। আমাদের অল্পসংখ্যক ডেভেলপার থাকা সত্ত্বেও এটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আমাদের অতিপ্রয়োজনীয় ফিচারগুলো তৈরি করতে সহায়তা করে।” ডিসকাস, পিন্টারেস্ট, কোরা, বিটবাকেট, রেড্ডিট, ডিগ সবগুলোই পাইথন দিয়ে তৈরি। সাম্প্রতিক একটি জরিপে দেখা গেছে যে, “সারা পৃথিবীতে বর্তমানে জনপ্রিয়তার হারে পাইথন এর স্থান রয়েছে দ্বিতীয়তে, প্রথম স্থানে রয়েছে জাভাস্ক্রিপ্ট।” অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থীরা প্রোগ্রামিংয়ের সঙ্গে পরিচিত হয় পাইথন ব্যবহার করে। বর্তমানে অ্যাঞ্জেললিস্টের সবচেয়ে চাহিদাপূর্ণ দক্ষতার তালিকাতেও পাইথন শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। অ্যাঞ্জেললিস্ট হলো স্টার্ট-আপ কোম্পানিগুলোর একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে এসব কোম্পানি জব অফার করে থাকে। আর বর্তমানে পাইথন প্রোগ্রামারদেরই দেওয়া হয় সর্বোচ্চ পরিমাণ বেতন।

পাইথন এর ইতিহাস

১৯৯০ সালে পাইথন ল্যাঙ্গুয়েজ এর সৃষ্টি হয়। নেদারল্যান্ডের সিডব্লিউআই (CWI) এর গবেষক গুইডো ভ্যান রস্যিউম পাইথন আবিষ্কার করেন। পাইথন অর্থ হলো অজগর, তবে এটি অজগরের নামে নামকরণ করা হয়নি। ইংল্যান্ডের “মন্টি পাইথন ফ্লাইং” সার্কাসের একটি কমেডি গ্রুপ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি এই ল্যাংগুয়েজের নামকরণ পাইথন করেন। ভ্যান রস্যিউম এর ভাষ্যমতে পাইথন ল্যাঙ্গুয়েজ এর শুরু হয়েছিলো, ১৯৯০ সালের শুরুর দিকে। তিনি একটি ডিস্ট্রিবিউটেড সিস্টেম নিয়ে কাজ করতেন। সেখানে তিনি সি ও ইউনিক্স শেল ব্যবহার করতেন। কিন্তু এগুলোর বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা নিয়ে হতাশ ছিলেন তিনি। সি ভাষায় মেমোরি ব্যবস্থাপনার বিশাল ঝামেলা, প্রতি নতুন প্রজেক্টে কিছু নির্দিষ্ট কাজ বারবার করা, প্রয়োজনীয় লাইব্রেরির অভাব সহ নানা ধরনের সীমাবদ্ধতা। মোদ্দাকথা, ইউনিক্স শেল সাধারণ কাজের জন্য চমৎকার হলেও জটিল লজিক্যাল সমস্যা নিয়ে কাজ করার উপযুক্ত ছিলো না। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে নিজেই একটি প্রোগ্রামিং ভাষা তৈরি করবেন, যা হবে সহজে ব্যবহারযোগ্য, পাঠযোগ্য ও শক্তিশালী। ১৯৮৯ সালের ডিসেম্বর মাসে ক্রিসমাসের সপ্তাহব্যাপী ছুটিতে প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজটি নিয়ে কাজ শুরু করার কথা ভাবেন তিনি। যেহেতু তার অফিস বন্ধ থাকবে, সময় কাটানোর মতো হাতে কোনো কাজও নেই। তাই বাসার কম্পিউটারটি দিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন একটি ইন্টারপ্রিটার তৈরি করবে, যেটি হবে তার নিজের স্ক্রিপ্টিং ভাষা। তবে ভাষাটি হবে এবিসি প্রোগ্রামিং ভাষার উত্তরসূরি। এরপর ই তৈরী করে ফেললেন পাইথন ল্যাঙ্গুয়েজ। সেইসাথে প্রোগ্রামিং ভাষাটির নাম ঠিক করলেন পাইথন। ভ্যান রস্যিউম পাইথনের শুরু থেকে শেষ অব্দি রয়েছেন। তিনি পাইথন এর প্রধান লেখক এবং বর্তমানে পাইথনের উন্নয়নে তিনিই প্রধান নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাকে পাইথনের আজীবন পরিচালক হিসেবে সম্মাননা দেয়া হয়েছে।
১৯৯১ সালে ভ্যান রস্যিউম পাইথন এর কোড প্রকাশ করেন (ভার্শন ০.৯.০) হিসেবে। পাইথন এর এই ধাপে ক্লাস ইনহেরিটেন্স, এক্সেপশন হ্যান্ডলিং, ফাংশন, ও প্রধান ডাটা টাইপ list, dict, str প্রভৃতি সংযুক্ত করেছিলেন। ১৯৯৩ সালে পাইথনের প্রধান ফোরাম comp.lang.python গঠিত হয়, এবং পাইথন ব্যবহারকারীদের জন্য তা মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়। ১৯৯৪ সালের জানুয়ারি মাসে পাইথন ১.০ সংস্করন বের হয়। এই সংস্করনে যে প্রধান বিষয়াদি যুক্ত হয় তা হলো ফাংশনাল প্রোগ্রামিং টুলস lambda, map, filter ও reduce। এভাবেই পর্যায়ক্রমে পাইথন এর উন্নতি হয় এবং বিভিন্ন ভার্সন রিলিজ হয়।

পাইথন এর বিভিন্ন ভার্সন

১৯৯৪ সালের জানুয়ারি মাস – পাইথন 1.0 (প্রথম স্ট্যান্ডার্ড প্রকাশনী)
২০০০ সালেের সেপ্টেম্বর মাস – পাইথন 1.6 ( শেষ মাইনর ভার্সন)
২০০০ সালের অক্টোবর মাস – পাইথন 2.0 (দ্বিতীয় স্ট্যান্ডার্ড প্রকাশনী)
২০১০ সালের জুলাই মাস – পাইথন 2.7 (শেষ মাইনর ভার্সন)
২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর মাস – পাইথন 3.0 (ডেপ্রিকেটেড কন্সট্রাক্ট এবং মডিউল রিমুভে জোর প্রদান)
২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাস – পাইথন 3.5 (নিরাপত্তা সংশোধন)
২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাস – পাইথন 3.6 (সর্বশেষ আপডেট ভার্সন )

পাইথন এর বৈশিষ্ট্য

  • এটির কোড সহজে পড়া যায়।
  • এটি বিভিন্ন অপারেটিং সিস্টেমে ব্যবহার করা যায়।
  • এটির স্ট্যান্ডার্ড লাইব্রেরি রয়েছে।
  • এটির দারুণসব ওয়েব ফ্রেমওয়ার্ক রয়েছে।
  • এটির শক্তিশালী কমিউনিটি রয়েছে।
  • অন্যান্য ল্যাঙ্গুয়েজের তুলনায় এটির কোড অনেক ছোট হয়।
  • এটিতে রয়েছে লিস্ট, ডিকশনারি ও সেটের মতো চমৎকার ডাটা কাঠামো।
  • সব লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন ও ম্যাক অপারেটিং সিস্টেমে পাইথন থাকে, আলাদাভাবে ইনস্টল করতে হয় না। উইন্ডোজে পাইথন আলাদা করে ইনস্টল করতে হয়, যা পাইথনের ওয়েবসাইট থেকে খুব সহজে নামানো যায়।

পাইথন এর সুবিধাসমূহ

১) পাইথন হলো ওপেনসোর্স ল্যাঙ্গুয়েজ। পাইথনে লেখা স্ক্রিপ্ট বিনা বাধায় ডিস্ট্রিবিউট করা যায়, এমনকি বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত ও করা যায়।

২) পাইথন জেনারেল – পার্পাজ ল্যাঙ্গুয়েজ (General Purpose language), অর্থাৎ প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ দিয়ে করা হয় এ রকম প্রায় সবকিছুতেই পাইথন ব্যবহার করা যায়। আর এটির লাইব্রেরি ব্যবহারের মাধ্যমে কাজ অনেক সহজেই হয়ে যায়। পেশাগত দিক থেকে পাইথনকে ওয়েব প্রোগ্রামিং, গুই প্রোগ্রামিং, নেটওয়ার্ক প্রোগ্রামিং, সিস্টেম প্রোগ্রামিং, বিগ ডেটা, ডেটা মাইনিং, ডেটা অ্যানালাইসিস, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, সায়েন্টিফিক কম্পিউটিং মোটামুটি সব সেক্টরেই ব্যবহার করা হয় এবং দিন দিন এর চাহিদা বেড়েই চলছে।

৩) পাইথন বিগিনার ফ্রেন্ডলি (Beginner Friendly) ল্যাঙ্গুয়েজ। এটির কোড খুব সহজে বোঝা যায়। পাইথন কোড পড়া আর ইংরেজি পড়া প্রায় একই। এজন্য মনে হয় না এটি কোনো প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ। পাইথন যেন বিনোদনেরই অপর নাম। এবং এ কারণেই বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাইথন দিয়েই প্রোগ্রামিং শেখানো শুরু হয়েছে।

৪) প্রোগ্রামিংয়ের জগতে পা দেওয়ার সাথে সাথে বোঝা যায়, কমিউনিটি সাপোর্ট কতটা গুরুত্বপূর্ণ। কোনো একটা প্রোগ্রাম লেখা শেষে মনে হবে সবকিছু ঠিক আছে, কিন্তু রান করার সময় দেখা যায় সমস্যা হচ্ছে। এমতাবস্থায় কমিউনিটি সাপোর্টের খুব প্রয়োজন হয়। প্রোগ্রামিং মানেই হলো সাহায্য নেওয়া ও দেওয়া। আর এ ক্ষেত্রে পাইথন খুব ই ভালো জায়গায় রয়েছে। কারণ পাইথনের রয়েছে পঞ্চম বৃহত্তম স্টাকওভারফ্লো কমিউনিটি। গিটহাবে পাইথনের রয়েছে দ্বিতীয় বৃহত্তম কমিউনিটি। সেইসাথে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম কমিউনিটি মিট-আপ পাইথনের ই হয়।

৫) পাইথন ক্যারিয়ার হিসেবে সেরা একটি ল্যাঙ্গুয়েজ। কারণ স্টাকওভারফ্লো ডেভেলপার সার্ভে ২০১৬ অনুসারে, পাইথন হলো ষষ্ঠ জনপ্রিয় ল্যাঙ্গুয়েজ। চার বছর ধরে পাইথন তার এই জায়গা দখল করে রয়েছে, আর এটির জনপ্রিয়তা উত্তরোত্তর বাড়ছেই। শুধু তা-ই নয়, বর্তমানে মোস্ট ওয়ান্টেড প্রোগ্রামিং টেকনোলজির তালিকায় পাইথন রয়েছে ২ নম্বরে। বিভিন্ন সেক্টরে টপ পেয়িং টেকনোলজির তালিকায় পাইথন রয়েছে শীর্ষ স্থানে।

পাইথন এর ক্ষেত্রসমুহ

সিস্টেম স্ক্রিপ্ট ও অটোমেশন :- পাইথন ল্যাঙ্গুয়েজ তৈরী করা হয়েছে ব্যাকএন্ড ডেভেলপমেন্টের জন্য। জটিল ভাষার স্ক্রিপ্টের চেয়ে পাইথন স্ক্রিপ্ট প্রচুর সময় বাঁচায় এবং সহজও বটে। অন্যদিকে বর্তমান ওয়েব সার্চ থেকে শুরু করে কন্টেন্ট ডাউনলোড, অনলাইন ফর্ম, ইমেইল সেন্ড সবক্ষেত্রে পাইথনের অটোমেশন ব্যবহার হচ্ছে। ইথিক্যাল হ্যাকিংয়েও এটির ব্যবহার রয়েছে।

ওয়েব ও অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট :- ওয়েব ডেভেলপারদের কাছে একটি জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ এটি। পাইথন দিয়ে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট করা খুব ই সহজ। যেমন, পাইথনের লাইব্রেরি Django ব্যবহার করে খুব সহজেই ওয়েব ও অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট করা যায়।

সায়েন্টিফিক কম্পিউটিং ও ডাটা এনালাইসিস :- অ্যাস্ট্রোনোমার, বায়লজিস্ট, নিওরোসায়েন্টিস্ট সব ক্ষেত্রেই পাইথন ব্যবহার হয়। এমনকি CERN, NASA এর মতো বৃহৎ সংস্থাগুলোতেও পাইথন ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও ডাটা মেনুপুলেসন টুলস, এক্সেপেরিমেন্টাল সাইকোলজি এর ক্ষেত্রেও পাইথনের ব্যবহার হয়।

মেশিন লার্নিং ও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স:- বর্তমানে এই দুটি জিনিস পৃথিবীর প্রাণভোমরা হয়ে গিয়েছে। ভয়েস, ছবি রিকগনিশন থেকে শুরু করে নেটফ্লিক্সের অ্যালগরিদম সবক্ষেত্রে রয়েছে এই দুটির ব্যবহার। আর এই ক্ষেত্রেও পাইথনের বিশাল সুবিধা রয়েছে ও সহজতরের জন্য লাইব্রেরি রয়েছে। যেমন, TensorFlow লাইব্রেরি, এটি একটি উচ্চতর নিউরাল নেটওয়ার্ক লাইব্রেরি। ধারণা করা যায়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় পাইথনের পরিসর বাড়তেই থাকবে।

গেম ডেভেলপমেন্ট :- গেম ডেভেলপারেরা পাইথন দিয়ে GUI (Graphical User Interface) অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করে। পাইথনের অনেক থ্রিডি এনিমেশন প্যাকেজ রয়েছে। PyGame, PySoy, Pykara লাইব্রেরির সাহায্যে তৈরি করা হয় এসকল গেম। এছাড়া সাম্প্রতিক মারভেল সিনেমা গুলোর স্পেশাল ইফেক্টেও পাইথন ব্যবহার করা হয়েছে।

পাইথন শেখার উপায়

নতুন হিসেবে পাইথন শেখার সর্বপ্রথম ধাপ হচ্ছে, পাইথনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যে ডকুমেন্টেশন রয়েছে তা ভালোভাবে পড়ে নেওয়া। পাইথন এর জন্য মৌলিক বিষয় জানতে Python.org, Pynative, learn Python, Sololearn এসকল ওয়েবসাইটের টিউটোরিয়াল অনুসরণ করতে হবে। টিউটোরিয়াল সম্পন্ন হয়ে গেলে কোডিং প্র্যাকটিস শুরু করতে হবে। পাইথন কোডিং শেখার জন্য প্র্যাক্টিসের বিকল্প কিছু নেই। পাইথন শেখার জন্য জনপ্রিয় আরও কিছু ওয়েবসাইট নিচে দেওয়া হলো :-

১. Udemy
২. Coursera
৩. Educative
৪. Learnpython org
৫. Codecademy com
৬. YouTube (FreeCodeCamp Channel)

অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে, পাইথন শিখতে কত দিন সময় লাগবে? আসলে এটির কোনো নির্দিষ্ট উত্তর নেই। তবে এটি সম্পূর্ন নির্ভর করবে ব্যক্তির চর্চার উপর। তিনি যদি প্রতিদিন প্রোগ্রামিং এর উপর চর্চা করেন, তাহলে ১ থেকে ২ মাসের মধ্যে প্রাথমিক বিষয় গুলো শিখে নিতে পারবে। তিনি যদি নিয়মিত প্রোগ্রামিং চর্চা না করে তাহলে তার শিখতে অনেক দিন সময় লাগবে। তিনি যদি দৃঢ় লক্ষে এডভান্স লেভেলের পাইথন শিখতে চায়, তাহলে তার ১ বছর সময় লাগতে পারে। তবে, মূল বিষয় হলো সব কিছু নির্ভর করবে চর্চার উপর।

বর্তমানে পাইথন একটি সেরা ও প্রতিষ্ঠিত প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ। প্রোগ্রামিংয়ে নবাগত কিংবা দক্ষতা বাড়ানো, যেটাই উদ্দেশ্য হোক না কেন পাইথন ল্যাঙ্গুয়েজ নির্বাচন সবচেয়ে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত হবে। দিন দিন পাইথনের ব্যবহার এত ব্যাপক পরিমানে বাড়ছে যে, হঠাৎ এর হারিয়ে যাওয়া বা নতুন কোনো ভাষা দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়ে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নিকট ভবিষ্যতে নেই। তাই চিন্তার কোনো কারন নেই। এবং বর্তমানে পাইথনের এর একজন ডেভেলপার প্রতি বছরে পারিশ্রমিক হিসেবে প্রায় $৯২০০০ থেকে শুরু করে $১৪০০০০ হাজার মার্কিন ডলার আয় করেন। সবশেষে বলা যায়, পাইথন এর জনপ্রিয়তা যেমন অন্যতম তেমনি পাইথন প্রোগ্রামারদেরও সারা বিশ্ব জুড়ে ও কর্মস্থানে চাহিদা তুমুল।

এই ছিলো পাইথন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা। যেকোনো প্রশ্ন জাগলে নির্দ্বিধায় কমেন্টবক্সে কমেন্ট করুন। সেইসাথে আমাদের অন্যান্য আর্টিকেলগুলোও পড়তে পারেন। ধন্যবাদ।