ইলন মাস্ক গোটা বিশ্বের তরুণদের জন্য একটি অনুপ্রেরণার নাম। তিনি যেন এক বিস্ময়। বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক। ই-কমার্স জায়ান্ট আমাজনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জেফ বেজোসকে ছাড়িয়ে বিশ্বের শীর্ষ ধনী এখন তিনি। তিনি একজন দক্ষিণ আফ্রিকার বিনিয়োগকারী, আবিষ্কারক, প্রকৌশলী ও প্রযুক্তি খাতে উদ্যোক্তা। ইলন মাস্ক মহাকাশ ভ্রমণ সংস্থা স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা, বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান টেসলা মোটরসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও পণ্য প্রকৌশলী, সোলারসিটির চেয়ারম্যান, দি বোরিং কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা, ওপেনএআইয়ের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান, নিউরালিংকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং পেপ্যালের একজন সহ-প্রতিষ্ঠাতা। সেইসাথে তিনি হাইপারলুপ নামক কল্পিত উচ্চ গতিসম্পন্ন পরিবহন ব্যবস্থার উদ্ভাবক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারের বৃহত্তম শেয়ার হোল্ডারও ইলন মাস্ক।
ইলন মাস্ক এর ব্যক্তিগত তথ্য
ইলন মাস্ক এর পুরো নাম ইলন রিভ মাস্ক। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার প্রোটোরিয়ায়, ২৮ শে জুন ১৯৭১ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। তার মায়ের নাম মায়ে কস্তুরী। তার বাবার নাম এরোল মাস্ক, তিনি একজন ইঞ্জিনিয়ার, নাবিক ও পাইলট। মাস্ক এর দুজন ভাই-বোন রয়েছে, ভাইয়ের নাম কিম্বল ও বোনের নাম টসকা। তিনি দুইটি বিয়ে করেছেন। ২০০০ সালে কানাডিয়ান রাইটার জাস্টিন উইলসনকে বিয়ে করেন। কিন্তু তাদের সংসার বেশদিন টিকেনি। ২০১০ সালে তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এরপর তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন বৃটিশ অভিনেত্রী টালুলাহ রেইলিকে। ২০১৬ সালে তাদেরও বিচ্ছেদ হয়ে যায়।
ইলন মাস্ক এর জীবন বৃত্তান্ত
ইলন মাস্ক প্রোটোরিয়া বয়েজ স্কুলে লেখাপড়া করেছেন। তার বয়স যখন ১০ বছর, তখন তার পিতামাতার ছাড়াছাড়ি হয়ে গিয়েছিলো। তবে এটি তার প্রতিভায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেনি। ছোটবেলা থেকেই তার কম্পিউটারে ঝোক ছিল। তাই কমবয়সে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শিখে ফেলেন। এবং কিছুদিনের মধ্যে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। মাত্র ১২ বছর বয়সে আবিষ্কার করেন নিজের প্রথম কম্পিউটার গেম। যার নাম ছিল ব্লাস্টার্স। সেটি তিনি ৫০০ ডলারে বিক্রি করেছিলেন। ১৯৮৯ সালে তিনি কুয়েন্স ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার আইন অনুযায়ী, সবাইকে সেনাবাহিনী ট্রেনিং নিতে হবে। কিন্তু তার এটির প্রতি অনীহা ছিল। তাই তিনি পালিয়ে যান। দেশ ছেড়ে কানাডায় এরপর ১৯৯২ সালে পাড়ি জমান অ্যামেরিকায়। সেখানে পেনসেলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ব্যবসা ও পদার্থ বিজ্ঞান নিয়ে লেখাপড়া করেন এবং ব্যাচেলর ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৯৭ সালে হোয়ারটন স্কুল থেকে অর্থনীতিতে ব্যাচেলর ডিগ্রী অর্জন করেন। এরপর জ্বালানি পদার্থ বিজ্ঞান নিয়ে পিএইচডি ডিগ্রীর জন্য স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। স্ট্যানফোর্ড এর মতো নামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েও মাত্র দুই দিন পরেই ছেড়ে দিয়ে চলে আসেন উদ্যোক্তা হওয়ার নেশায়। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তখন তথ্য প্রযুক্তির জোয়ার চলছিলো। তাই তিনিও এ স্রোতে গা ভাসিয়ে দেন। তিনি প্রতিষ্ঠা করেন Zip 2 নামক আনলাইন ভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান। এটি ছিলো তার প্রথম প্রতিষ্ঠান, এটি একটি সফটওয়্যার। এটি অনলাইনে সিটি গাইড দিয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করার পর ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। নিউ ইয়র্ক টাইমস ও শিকাগো ট্রিবিউনের কাছে তারা তথ্য বিক্রি করা শুরু করেন। এরপর ১৯৯৯ সালে Compaq Computers এর কাছে ৩০৭ মিলিয়ন ডলারে Zip 2 টি বিক্রি করে দেন।
২০০১ সালে Confinity কোম্পানির সাথে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন PayPal। ২০০২ সালে eBay কোম্পানি এটি ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে ক্রয় করে নেয়। বর্তমানে সেখান থেকে ইলন মাস্ক শেয়ারে ১৬৫ মিলিয়ন ডলার আয় করেন প্রতি বছরে।
অনলাইনে সাফল্যের পর তার মাথায় নতুন চিন্তা আসে, তিনি মঙ্গল গ্রহে থাকতে চান। রকেট নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। ২০০২ সালে SpaceX নামের একটি টেক অফ কোম্পানি লঞ্চ করেন। এরপর অল্প কয়েক দিনের মধ্যে ইলন মাস্ক রকেট বিজ্ঞানী হিসাবে পরিচিতি পেয়ে যান। স্পেসশিপ নিয়ে তার উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি ২০৫০ সালের মধ্যে এক মিলিয়ন মানুষকে মঙ্গল গ্রহে পাঠাতে চান। ধারণা করা হয় ভবিষ্যতে মানুষ একটি আন্তঃ-প্ল্যানেটে পরিণত হবে, যা মঙ্গল গ্রহে উপস্থিত থাকবে। ইলন মাস্ক রকেট সম্পর্কে তেমন কিছু জানতেন না। কিন্তু অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তিনি নিজেকে রীতিমত একজন রকেট বিজ্ঞানীতে পরিনত করেন। তিনি কিভাবে এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন জানতে চাইলে তিনি জানান, “আমি (এই বিষয়ে) অনেকগুলো বই পড়েছি।” ২০০৮ সালে SpaceX সুপ্রতিষ্ঠিত মহাকাশযান প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিনত হয়। বলা বাহুল্য, বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠিয়েছেন ইলন মাস্কের কোম্পানি স্পেস এক্স। ইলন মাস্ক এর স্পেস এক্স এর কল্যাণে ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে যাওয়ার খরচ ৯০ % কমানো সম্ভব হয়েছে। স্পেস এক্স এর অর্জনের খাতায় যুগান্তকারী সব সাফল্য এর ব্যাপারে মাস্ক বলেন, “আমাদের এই অর্জনের জন্য আমি নিজেকে খুবই ভাগ্যবান মনে করছি। মনে হচ্ছে যেন আমরা সুপার বোউল জিতে নিয়েছি।”
প্রত্যেক গাড়ি প্রেমীদের কাছে বিশ্ববিখ্যাত টেসলা মোটরস অত্যন্ত জনপ্রিয়। এই অত্যাধুনিক গাড়ি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানটির সহ উদ্যোক্তা, প্রধান নির্বাহী ও প্রধান পন্য পরিকল্পনাকারী হলেন ইলন মাস্ক। কোম্পানীটি শুধুমাত্র সাধারনের ক্রয়সীমায় সেরা গাড়িগুলোই বানায় না, এর সাথে সাধারন ব্যবহার্য ইলেক্ট্রনিকস, ব্যাটারী এবং সোলার রুফও তৈরী করে। ইলেকট্রিক ভেহিকেল কোম্পানি টেসলা’তে তিনি সিইও একই সঙ্গে প্রতিটি পন্যের আইডিয়া সৃষ্টির থেকে শুরু করে ডিজাইন, প্রকৌশল ইত্যাদি সবই তিনি নিজে তত্বাবধান করেন। প্রতিষ্ঠার মাত্র পাঁচ বছর পর টেসলা বাজারে নিয়ে আসে বিশ্বের সেরা স্পোর্টস কার “রোডস্টার”। মাত্র ৩.৭ সেকেন্ডের মধ্যেই রোডস্টার ০ থেকে এর গতিবেগ ঘন্টায় ৬০ কিলোমিটারে নিয়ে যেতে পারে। এছাড়াও গাড়িটিতে কোনোরকম জ্বালানী তেল ব্যা গ্যাস ব্যবহার করতে হয় না। লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারীর মাধ্যমে ২৫০ মাইল পাড়ি দিতে পারে। ২০১০ সালের জুনে টেসলা কোম্পানি পাবলিক লিমিডেট কোম্পানী হিসেবে স্টক মার্কেটে নামে এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এর মূল্য দাঁড়ায় ২২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে। কোম্পানীর প্রথম তৈরী ইলেকট্রিক সিডান “Model – S” বাজারে দারুন সফলতা লাভ করে। একবার ব্যাটারি ফুল চার্জ হলে এটি ২৬৫ মাইল পাড়ি দিতে সক্ষম। মোটর ট্রেন্ড ম্যাগাজিন “Model – S” -কে ২০১৩ সালের সেরা গাড়ির মর্যাদা প্রদান করে। টেসলার জনপ্রিয় গাড়ি “Model – S” আমেরিকান ন্যাশনাল হাইওয়ে সেফটি এডমিনিস্ট্রেশন এর কাছ থেকে সেফটি রেটিং ৫ স্কেলে ৫.৪ স্কোর অর্জন করে। এটি একটি রেকর্ড ব্রেকিং রেটিং। ২০১৭ সালের নভেম্বরে কোম্পানীর ডিজাইন স্টুডিওতে ইলন মাস্ক তাদের নতুন দু’টি গাড়ি “টেসলা সেমি” এবং “রোডস্টার” এর পর্দা উন্মোচন করে এবং সেবারও তারা হৈচৈ ফেলে দেন। “টেসলা সেমি” একটি সেমি ট্রাক, যা একবার ব্যাটারি ফুল চার্জ দিলে ৫০০ মাইল পথ পাড়ি দিতে পারবে, এবং সেইসাথে কোম্পানীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে গাড়িটির ব্যাটারি ও মোটর ১ মিলিয়ন মাইল পর্যন্ত ভ্রমণে কোনও সমস্যা ছাড়াই চলবে। অন্যদিকে, রোডস্টারকে ধরা হচ্ছে আজ পর্যন্ত তৈরী হওয়া সবথেকে দ্রুতগামি গাড়ি হিসেবে। এক উন্মোচন অনুষ্ঠানে ইলন মাস্ক বলেছিলেন, “আমার এই প্রকল্পের একমাত্র উদ্দেশ্য হল খনিজ জ্বালানী চালিত গাড়িকে একটি বড় আঘাত দেয়া। (আমার গাড়ির পাশে) খনিজ জ্বালানীর স্পোর্টসকার চালালে মনে হবে আপনি ডিমের খোসায় তৈরী একটি স্টিম ইঞ্জিন চালাচ্ছেন।”
২০১৩ এর আগস্টে ইলন মাস্ক যাতায়াতের একটি নতুন পদ্ধতির কথা প্রকাশ করেন যার নাম তিনি দেন “হাইপার লুপ”। এই পদ্ধতির মাধ্যমে খুব সহজে ও অতি অল্প সময়ে এক শহর থেকে অন্য শহরে যাতায়াত করা যাবে। হাইপারলুপ হলো তার এমন একটি প্রজেক্ট যার লক্ষ্য হলো মানুষের ভ্রমণকে দ্রুত করার জন্য দ্রুতগতির প্রেসারাইজড টিউব ক্যাপসুল তৈরি করা। হাইপারলুপ এর জন্য সুরঙ্গ খুঁড়তে তিনি “দ্যা বোরিং কোম্পানি” নামের একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছেন।
২০১৫ সালে Starlink তৈরির কাজ শুরু করে ইলন মাস্কের SpaceX। যে সব গ্রাম্য এলাকায় হাই স্পিড ইন্টারনেট পৌঁছায়নি সেই সব জায়গায় অত্যাধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা পৌঁছে দেওয়াই Starlink এর উদ্দেশ্য। ২০১৮ সালে প্রথম কক্ষপথে পাঠানো হয় প্রোটোটাইপ স্যাটেলাইট। এর পর থেকে Starlink ইন্টারনেট কানেকশনের জন্য ১০০০ এর বেশি স্যাটেলাইট কক্ষপথে পাঠিয়েছে ইলন মাস্ক এর কোম্পানি।
ইলন মাস্ক একজন পরিবেশ কর্মী কারণ তিনি পরিবেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তার বাস্তব আরেকটি প্রমাণ হলো “SolarCity”। তিবি বিশ্ব উষ্ণায়নের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। এ সোলারসিটির মাধ্যমে সৌরশক্তিকে মানুষের কাছে জনপ্রিয় করে তুলেছেন। আরও বেশি মানুষের হাতে বহু ব্যবহারযোগ্য জ্বালানী ও শক্তি তুলে দেয়া এবং এই শক্তির ব্যবহারকে আরও বেশি প্রচলিত করার চেষ্টায় ২০১৬ এর আগষ্ট মাসে ইলন মাস্ক তার ইলেক্ট্রিক গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ও সৌরশক্তি উৎপাদনকারী কয়েকটি কোম্পানীর মাঝে ২.৬ বিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি করেন। এই চুক্তির ব্যাপারে টেসলার ওয়েবসাইটের নিচে প্রকাশিত হয়, “সৌরশক্তি এবং এর ব্যবহারকারী সবথেকে ভাল কাজ করে যখন তারা একই জায়গায় থাকে। টেসলা (ব্যবহারকারী) এবং সোলার সিটি (সৌরশক্তি উৎপাদনকারী) একসাথে এমন সব সুনির্মিত, বানিজ্যিক পন্য প্রস্তুত করতে পারবে যা শক্তি প্রস্তুত, সংরক্ষণ ও ব্যবহারের ধারনাই বদলে দেবে।”
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রতিও ইলন মাস্ক এর তীব্র ঝোক। তিনি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিবেদিত অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ওপেন এ আই (Open AI) এর চেয়ারম্যান। এই প্রতিষ্ঠানটি প্রযুক্তি জগতের ডিজিটাল বুদ্ধিমত্তা উন্নয়নের জন্য গবেষণার কাজে নিয়োজিত। ২০১৭ সালে তিনি ‘নিউরালিংক” নামের এক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত করেন। যেটি এমন এক চিপ বানানোর জন্য গবেষণা করছে যা মানুষের মস্তিষ্কে স্থাপন করে সফটওয়্যারের সাথে সমন্বয় ঘটাতে সক্ষম হবে।
এছাড়াও ২০২২ এর ১৪ মার্চ মাইক্রো ব্লগিং প্ল্যাটফর্ম টুইটারের বৃহত্তম শেয়ারহোল্ডার হয়েছেন ইলন মাস্ক। টুইটারের ৯ দশমিক ২ শতাংশ শেয়ার কিনেছেন তিনি। ইউএস সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের দায়ের করা নথি অনুসারে, ইলন মাস্ক টুইটারের প্রায় সাড়ে সাত কোটি শেয়ার কিনেছেন। ২৮৯ কোটি ডলারে তিনি এই শেয়ার কিনেছেন। ইলন মাস্কের শেয়ার কেনার ঘোষণায় টুইটারের শেয়ারের দাম বেড়েছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিএফআরএ রিসার্চের বিশ্লেষক অ্যাঞ্জেলো জাইনো বলেন, “টুইটারে ইলন মাস্কের বিনিয়োগ তাঁর মোট সম্পদের খুবই ক্ষুদ্র একটি অংশ। তিনি চাইলে টুইটার কিনেও নিতে পারেন।” নতুন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আনার বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে ভাবছেন বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তা ইলন মাস্ক। টুইটারে এক ব্যক্তি ইলন মাস্ক এর কাছে জানতে চেয়েছিলেন, “বাকস্বাধীনতাকে অগ্রাধিকার দিয়ে নতুন সামাজিক মাধ্যম তৈরি করবেন কি না ইলন মাস্ক?” এই প্রশ্নের পরই নতুন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আনার ইঙ্গিত দিয়েছেন ইলন মাস্ক। এরপর টুইটারে জনমত জরিপ করেন ইলন মাস্ক। “টুইটার বাকস্বাধীনতার নীতি মানছে কি না” -এ প্রশ্নে ৭০ শতাংশ উত্তরদাতা বলেন, টুইটার নীতি মানছে না। তিনি ঐ জরিপে জানিয়েছিলেন, এই ভোট নতুন যোগাযোগ মাধ্যম আনার ক্ষেত্রে মূল্যবান ভুমিকা পালন করবে।
তরুণদের উদ্দেশ্য ইলন মাস্ক
ইলন মাস্ক এর অল্প বয়সে তার পিতামাতার ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ায় তিনি ভীষণ আঘাত পেয়েছিলেন। তার একটি প্রসিদ্ধ উক্তি আছে – “আমি পিতামাতার হাত ধরে বড় হয় নি, বড় হয়েছি বই পড়ে।” কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষক লেক্স ফ্রিডম্যানকে এক সাক্ষাৎকারে তিনি তরুণদের পরামর্শ দিয়েছেন, “বেশি বেশি বই পড়তে হবে আর নেতা হওয়ার প্রবণতা থেকে দূরে থেকে মানুষের সাহায্যে কাজ করতে হবে।” সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন তরুণদের উদ্দেশ্যে যারা বড় কিছু করতে চান, “মানুষের কাজে লাগে এমন কিছু করার চেষ্টা করতে হবে। মানুষের কাজে লাগবে এমন কিছু করাটা অবশ্য খুব কঠিন। তবে তাই ই করতে হবে।” পৃথিবীর যা কিছু ভোগ করা হয়, তার থেকেও বেশি অবদান রাখতে তরুণদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সফল এই প্রযুক্তি উদ্যোক্তা। তিনি শিক্ষার্থীদের বেশি বই পড়তে ও তাদের সাধারণ জ্ঞানের বিকাশ ঘটানোর পরামর্শ দিয়েছেন, যাতে বিশ্বজুড়ে কী ঘটছে, তা জানতে পারেন তারা। ২০১৪ সালে এক সাক্ষাৎকারে ইলন মাস্ক বলেন, “তিনি সম্ভাব্য একজন কর্মীর মধ্যে মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রির পরিবর্তে অসাধারণ দক্ষতার প্রমাণ খুঁজেন।” জার্মান প্রকাশনা অটো বিল্ডকে দেওয়া আরেক সাক্ষাৎকারে তার কর্মীদের সম্পর্কে ইলন মাস্ক বলেন, “কলেজ ডিগ্রি এমনকি স্কুল সার্টিফিকেটেরও প্রয়োজন নেই। মহান কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক হলে মহান কিছু করার সামর্থ্য তৈরি হয়। কিন্তু এটাও আবশ্যক নয়। বিল গেটস, ল্যারি এলিসন, স্টিভ জবসের মতো মানুষদের দেখেন, তাদের কেউই কলেজ ডিগ্রি নেননি। কিন্তু আপনি যদি তাদের নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ পান, তাহলে এটা অবশ্যই একটা ভালো ব্যাপার। তাই আপনাকে সফল হতে হলে অনেক বেশি সৃজনশীল চিন্তা ভাবনা করতে হবে। সাফল্য ধরা দেবে আপনার ঝুলিতে।” সারাবিশ্বের তরুণদের আইডল ইলন মাস্ক আরও বলেন, “আপনি পুরো বিশ্বের বিভিন্ন ধরনের মানুষের সঙ্গে যত বেশি কথা বলবেন ও মেলামেশা করবেন, তত বেশি আপনার মন মুক্ত হবে। একজন সফল উদ্যোক্তা হতে বিশ্বের শীর্ষ ধনীর পরামর্শ, সমাজের বিভিন্ন স্তরের, বিভিন্ন শিল্প, পেশা ও বিশেষভাবে দক্ষ মানুষদের সঙ্গে কথা বলুন।”
বর্তমান প্রযুক্তি বিশ্ব কিংবা কর্পোরেট জগত- যেটাই বলেন, ইলন মাস্ক এর মতো প্রতিভাবান ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া মুশকিল। নিজের সম্পদ ব্যবহার করে কল্পনাকে বাস্তব করার চেষ্টা চালাচ্ছেন ইলন মাস্ক। তাই মাস্ক কে মজা করে “থ্রিলিয়নেয়ার” বলা হয়ে থাকে। তিনি শুধু সফল ব্যক্তি ই নন, বরং তরুণদের আইকন। তার নাম- ডাক টেসলা ও স্পেসএক্স এর কল্যাণে হলেও তিনি এর বাইরেও অসাধারণ সব উদ্যোগ নিয়েছেন। সবাইকে পেছনে ফেলে বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তি হিসেবে নিজের নাম লিখিয়েছেন। তিনি মানুষের পছন্দের তালিকার শীর্ষে থাকার পাশাপাশি অনেকের কাছে বিতর্কিতও হয়েছেন। কিন্তু পিছুপা হোন নি। ফোর্বস ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হওয়া ডিসেম্বর ২০১৭ সালের হিসেব অনুযায়ী, মাস্কের মোট সম্পদের পরিমান ছিলো ২০.২ বিলিয়ন (২২০০ কোটি) মার্কিন ডলার। এর মাধ্যমে ২০১৭ সালে শীর্ষ ধনী ব্যক্তি জেফ বেজোসকে ছাড়িয়ে যান ইলন মাস্ক। তিনি ফেসবুকের সহপ্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গকে পাশ কাটিয়ে বিশ্বের তৃতীয় ধনী ব্যক্তি হওয়ার এক সপ্তাহ পর মাইক্রোসফটের সহ প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস কে পাশ কাটিয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী ব্যক্তি হয়েছিলেন। বর্তমানে মাস্কের মোট ধনসম্পদের মূল্য জেফ বেজোসের চেয়ে দেড় মিলিয়ন বেশি। এবছর ৭ জানুয়ারি টেসলার শেয়ারের দর বৃদ্ধির পর তার সম্পদের পরিমাণ ১৮৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। ইলন মাস্কের মোট সম্পত্তির প্রায় তিন চতুর্থাংশ টেসলা থেকে আসে। টেসলা ওনারস অব সিলিকন ভ্যালির এক টুইট বার্তায় বলা হয়, “বর্তমানে মাস্কের সম্পদের পরিমাণ ১৯০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।” মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ বলছে, “গত বছর থেকে ইলন মাস্কের মোট সম্পদের পরিমাণ ১৫০ বিলিয়ন ডলার বেড়েছে।” তিনি ইতিহাসে প্রথম ব্যাক্তি যে ১ বছরে ব্যাক্তিগত সম্পত্তি তে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করেছেন।
এই ছিলো ইলন মাস্ক এর জীবনী সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। যেকোনো প্রশ্ন জাগলে নির্দ্বিধায় কমেন্টবক্সে কমেন্ট করুন। যেকোনো কিছুর সম্পর্কে তথ্য জানতে আমাদের সঙ্গেই থাকুন। সেইসাথে আমাদের অন্যান্য আর্টিকেলগুলোও পড়তে পারেন। ধন্যবাদ।