নেটওয়ার্কের পঞ্চম যুগ 5G

সারা বিশ্ব এখন প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে উঠেছে। দৈনন্দিন জীবনে প্রযুক্তির ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তথ্য আদান-প্রদান কিংবা যোগাযোগ মাধ্যম সবই সহজ হয়ে গিয়েছে প্রযুক্তির কল্যাণে। এই তথ্য আদান-প্রদানে মূল ভুমিকা পালন করে নেটওয়ার্ক। নেটওয়ার্ক জেনারেশনের ধাপে ধাপে পার করে আমরা এখন আছি 4G এর যুগে। নেটওয়ার্কের G মানে ‘জেনারেশন’। আমরা সবাই জানি, নতুন জেনারেশনের ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক মানেই বেশি সুবিধা ও বেশি গতির ইন্টারনেট। 1G নেটওয়ার্কের যুগে আমরা পেয়েছিলাম মোবাইলে কথা বলার সুযোগ। 2G নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আমরা পেয়েছিলাম ম্যাসেজ বা বার্তা পাঠানোর সুবিধা। এরপর 3G নেটওয়ার্ক আসার পর আমরা প্রথমবারের মতো স্বতস্ফূর্তভাবে ইন্টারনেট চালানোর সুযোগ পেলাম। 2G এর পর 3G এর যুগে প্রবেশ করেই বদলে যায় প্রযুক্তি ব্যবহারকারীদের জীবনযাত্রা। এরপর 4G নেটওয়ার্ক আসার পর আমরা ভিডিও কল এ কথা বলা, ইন্টারনেট এ গেম খেলা, ভিডিও দেখা, দূর দূরান্তের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা, তথ্য আদান প্রদান করা এই সবকিছু আরও সহজভাবে করতে পারছি। 4G এসে গতিশীল করেছে বাংলাদেশের ডিজিটালাইজেশন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্য সর্বক্ষেত্রেই লেগেছে এর ছোয়া। 4G এর মাধ্যমে তথ্য-প্রযুক্তির সুবিধা ছড়িয়ে পড়েছে শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত। এবার তথ্য-প্রযুক্তিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটাতে বাংলাদেশে চালু হতে যাচ্ছে 5G সেবা। 1G থেকে শুরু হওয়া নেটওয়ার্কের সূচনা আধুনিক হয়ে 3G পেরিয়ে 4G তে এসেছে। তবে বর্তমানের 4G নেটওয়ার্কে অনেক সময় বাধাপ্রাপ্ত হতে হয়। 4G নেটওয়ার্কে সৃষ্ট বাধাগুলো দূর করতে আগামী আধুনিকীকরণ নেটওয়ার্ক হিসেবে আসছে 5G।

পঞ্চম জেনারেশন নেটওয়ার্ককে সংক্ষেপে বলা হয় 5G বা ফাইভজি। 5G হলো এক যুগান্তকারী নেটওয়ার্ক যার ছোঁয়ায় আমাদের জীবনধারায় আমূল পরিবর্তন আসবে। 4G এর তুলনায় অনেক দ্রুতগতিতে তথ্য আদান প্রদান করা যাবে 5G নেটওয়ার্কে। হাই ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করা হয়েছে এই 5G নেটওয়ার্কে। এর মাধ্যমে একসঙ্গে ও একই সময়ে অনেকগুলো মোবাইল ফোনে দ্রুতগতিতে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যাবে। তথ্যমতে, মানুষ ও ডিভাইসের মধ্যে তৈরি হবে জিরো ডিসটেন্স কানেক্টিভিটি। এতে প্রযুক্তিগত বিষয়গুলো যেমন সমৃদ্ধ হবে, তেমনি সহজ হয়ে যাবে প্রযুক্তিনির্ভর অনেক কাজ। 5G নেটওয়ার্কে 4G এর নেটওয়ার্কের কোন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না। গ্রাহক সব ধরনের সেবা দ্রুত গতিতে ব্যবহার করতে পারবে। 4G নেটওয়ার্কের তুলনায় এটি হবে একদম আলাদা ধরনের কারন, 5G নেটওয়ার্কের নেটওয়ার্ক ফ্রিকুইন্সি স্পিড হবে সেকেন্ডে ১ এমবিপিএস। বর্তমানের 4G নেটওয়ার্ক ইন্টারনেট স্পিড দেয় ৪৫ এমবিপিএস আর 5G নেটওয়ার্ক ইন্টারনেট স্পিড দিবে ১ জিবিপিএস (1 GBPs)। 5G নেটওয়ার্ক ব্যবহার করার মাধ্যমে একটি ফোনের সাথে অনেক গুলো ফোনের নেটওয়ার্ক ফ্রিকুইন্সি একত্রে যোগ থাকবে যার ফলে তথ্য আদান প্রদান ও যোগাযোগ অনেক দ্রুত হবে।

5G নেটওয়ার্কের গঠন

5G নেটওয়ার্ক হলো স্বল্পদৈর্ঘ্য তরঙ্গের মাধ্যমে তারবিহীন ডাটা আদান প্রদানের সর্বশেষ নেটওয়ার্ক। যা পাঁচটি সম্পূর্ণ নতুন ও যুগান্তকারী প্রযুক্তির সমন্বয়ে গঠিত। সেগুলো হলো :-
– মিলিমিটার ওয়েভ
– স্পিড সেল
– ম্যাসিভ মিমো
– বিমফর্মিং
– ফুল ডুপ্লেক্স

১. মিলিমিটার ওয়েভ :- একটি মোবাইল সাধারণত নির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সির তরঙ্গ ব্যবহার করে, আর এই ফ্রিকোয়েন্সি থাকে ছয় গিগাহার্টজের নিচে এবং তরঙ্গের দৈর্ঘ্য আকারে অনেকটাই বড়ো ও এর পরিমাণ নির্দিষ্ট। তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের এই সীমাবদ্ধতার কারণে মোবাইল অপারেটর কোম্পানীগুলো এই ফ্রিকোয়েন্সির তরঙ্গের মাধ্যমে কেবল নির্দিষ্ট পরিমাণ ডাটা ট্রান্সফার করতে পারে। এজন্য মোবাইলে কল করার সময় বা ইন্টারনেট ব্যবহার করার সময় কিংবা কোনো নির্দিষ্ট স্থানে অধিক পরিমাণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী থাকার ফলে নেটওয়ার্ক সিগনাল প্রায়শই ড্রপ করে বা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং স্পীড কমে যায়। এই সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজন তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের সীমানা বৃদ্ধি। তাই পরীক্ষামূলকভাবে মিলিমিটার ওয়েভ বা মিলিমিটার তরঙ্গ ৩০-৩০০ গিগাহার্টজ ফ্রিকোয়েন্সির তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের তরঙ্গ নিয়ে কাজ করা শুরু করলো। এই ফ্রিকোয়েন্সির তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের তরঙ্গ আগে কখনো ব্যবহার করা হয়নি মোবাইল ফোনের জন্য। এটি প্রচুর ডাটা অর্জন করতে পারবে এবং প্রতি সেকেন্ডে ১ GB গতিতে ডাটা স্থানান্তর করতে পারবে। কিন্তু এই ফ্রিকোয়েন্সির তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের একটি সমস্যা আছে। মিলিমিটার ওয়েভ ভবন, গাছ, মানুষ কিংবা কোন ভারি বস্তু ভেদ করে অতিক্রম করতে পারে না। এমনকি বৃষ্টি কিংবা ঘন কুয়াশাতেও এর চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। এই সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে গবেষকরা উদ্ভাবন করলো দ্বিতীয় প্রযুক্তি, স্পিড সেল।

২) স্পিড সেল :- 5জি প্রযুক্তির দ্বিতীয় ভিত্তি হলো স্পিড সেল। মিলিমিটার-ওয়েভের সমস্যা যেখান থেকে শুরু, সেখান থেকেই স্পিড সেলের কাজ। হাই ওয়েভের মিলিমিটার তরঙ্গ কোনও বাধা অতিক্রম করতে পারে না। যেহেতু mm তরঙ্গ বাধাগুলিতে কাজ করতে পারে না, তাই মূল সেল টাওয়ার থেকে সিগন্য়াল রিলে করার জন্য় পুরো অঞ্চল জুড়ে প্রচুর পরিমাণে মিনি সেল টাওয়ার স্থাপন করা হয়। এই প্রযুক্তির ফলে শহরাঞ্চলের বাসিন্দারা সবচেয়ে বেশি সুবিধা ভোগ করবেন। কারণ শহরে দালানকোঠা বেশি আর অল্প জায়গায় বেশি মানুষ বসবাস করে। তাই বেশি বেশি টাওয়ার থাকার ফলে যখন একজন শহুরে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাবেন, কিংবা চলন্ত অবস্থায় থাকবেন, তখন একটি টাওয়ার অতিক্রম করার সাথে সাথেই আরেকটি টাওয়ার সিগনাল পাঠাতে শুরু করবে, ফলে শহরবাসী পাবেন সার্বক্ষনিক দ্রুতগতির নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ।

৩) ম্যাসিভ মিমো :- 5G প্রযুক্তির পরবর্তী ভিত্তি হলো Massive MIMO। MIMO এর পূর্ণ রূপ হলো মাল্টিপল ইনপুট, মাল্টিপল আউটপুট। বর্তমানে ব্যবহৃত 4G এর বেজ স্টেশনগুলোতে অ্যান্টেনার ডজনখানেক পোর্ট থাকে, সব ধরনের ট্রাফিক সামলানোর জন্য। কিন্তু ম্যাসিভ মিমো এর বেজ স্টেশনগুলো সমর্থন করবে প্রায় শখানেক পোর্ট। এতে করে বর্তমানে ব্যবহৃত নেটওয়ার্কের চাইতে নতুন নেটওয়ার্কের ক্যাপাসিটি হবে ২২ গুণ বা তারও বেশি। MIMO ১০০ অ্যান্টেনাকে একসাথে সমর্থন করতে পারার ফলে বেশি ট্র্যাফিক থাকাকালীন টাওয়ারের ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলবে। এই প্রযুক্তিটির সাহায্যে পূর্বের সকল সীমাবদ্ধতা ছাড়িয়ে যাবে। বর্তমানে ব্যবহৃত অ্যান্টেনাগুলো একই সময়ে সবদিকে সমানভাবে সিগনাল নিক্ষেপ করে, আর এতে করে একাধিক সিগনাল একটি আরেকটিকে ক্রস করার ফলে ব্যতিচার ঘটে, ফলে সংযোগে বিঘ্ন ঘটে। এ সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে গবেষকগণ আরেকটি প্রযুক্তির সাহায্য নেবেন, বীমফর্মিং।

৪) বিমফর্মিং :- এটি নিয়মিতভাবে একাধিক সোর্সকে নজরদারি করতে পারবে এবং যখন একটি সিগন্যাল ব্লক থেকে অন্য শক্তিশালী এবং উচ্চতর স্পিডের টাওয়ারে সুইচ করতে পারবে। এটি নিশ্চিত করবে যে, নির্দিষ্ট ডাটা কেবল একটি নির্দিষ্ট দিকে যাক। যার কারণে একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক গ্রাহকের কাছে উচ্চগতির ইন্টারনেট পরিষেবা পৌঁছে যাবে। বিমফর্মিং এর সাহায্যে সবদিকে সিগনাল নিক্ষেপ করার বদলে অ্যান্টেনাগুলো কেবল যেখানে ব্যবহারকারী থাকবে সেখানেই সিগনাল পাঠাবে, অন্য কোথাও নয়। বিমফর্মিং হলো ব্যবহারকারীর কাছে সর্বোচ্চ স্পীডে ডাটা পাঠানোর সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি। যদি কোন নির্দিষ্ট ব্যবহারকারী চলন্ত অবস্থায় থাকে, তাহলে অ্যান্টেনা সেই ব্যবহারকারীকে অনুসরণ করে সিগনালের স্থান পরিবর্তন করবে। এভাবে নির্দিষ্ট দিকে সিগনাল পাঠানোর ফলে সংযোগ বিঘ্ন ঘটা কিংবা বিচ্ছিন্ন হবার সম্ভাবনা থাকবে না। ফলে একই সময়ে একটি অ্যান্টেনা অনেক বেশি ইনপুট ও আউটপুট সিগনাল সামলাতে পারবে। ম্যাসিভ মিমো এর বেজ স্টেশনের অ্যান্টেনাগুলো যখন কোন ইনপুট সিগনাল গ্রহণ করবে, তখন এটি সিগনাল পাঠানোর দিক ও সময় মনে রাখবে। তারপর এটি সিগনাল প্রসেসিং অ্যালগরিদমের সাহায্যে চিহ্নিত করে ঠিক কোথা থেকে সিগনালটি এসেছে, আর কিভাবে সবচেয়ে দ্রুত সময়ে ব্যবহারকারীর মোবাইলে আউটপুট সিগনাল পাঠানো যায় সেই ব্যবস্থা করবে। যার ফলে বিমফর্মিং এর কারণে পাওয়া যাবে রকেট গতির রিয়েল টাইম ডাটা স্ট্রিমিং এবং কোনো প্রকার ল্যাটেন্সি বা দেরী ছাড়াই। অবশ্য ল্যাটেন্সি আছে, কিন্তু এর পরিমাণ এতটাই কম যে নেই বললেই চলে অর্থাৎ ১ মিলিসেকেন্ড বা তারচেয়ে কম।

৫) ফুল ডুপ্লেক্স :- এটি এমন একটি প্রযুক্তি যা একই ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডে একই সাথে ডাটা প্রেরণ এবং গ্রহণ করতে সাহায্য করবে। এই প্রযুক্তি ল্যান্ডলাইন টেলিফোন এবং শর্ট-ওয়েভ রেডিওতে ব্যবহৃত হয়। এটি দ্বিমুখী রাস্তার মতো, যা উভয় দিক থেকে একই ট্র্যাফিক প্রেরণ করে।

5G এর সুবিধা

গবেষকরা বলেছেন “5G নেটওয়ার্ক এর স্পিড হবে ১০ জিবিপিএস বা সেকেন্ডে ১০ গিগাবিট পর্যন্ত।” 5G হবে বর্তমানের 4G নেটওয়ার্কের চেয়ে অনেক বেশি দ্রুতগতিসম্পন্ন। 4G নেটওয়ার্কে যে ইন্টারনেট স্পিড পাওয়া যায়, 5G তে তার চেয়ে ১০ গুণ বেশি স্পিড পাওয়া যাবে। 5G নেটওয়ার্কে ২ ঘণ্টার একটি ভিডিও ১০ সেকেন্ডের কম সময়ে ডাউনলোড করা যাবে। অন্যদিকে, 4G তে একই ভিডিও ডাউনলোড করতে ৭ মিনিটের মত সময় লাগে। এছাড়া কয়েক গিগাবাইটের সফটওয়্যার আপডেট করতে 4G নেটওয়ার্কের মত ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হবেনা। 5G এর মাধ্যমে ডাটা ট্রান্সফার রেট 4G এর তুলনায় ৩০-৫০ গুন বেশি হবে। 5G এর ল্যাটেন্সিও অনেক কম হবে। ল্যাটেন্সি হলো সার্ভারের সাথে কানেক্ট করার সময়, যেটিকে পিং বলা হয়। কম ল্যাটেন্সি এর ফলে অনলাইন গেমিং সহ আরো অনেক অনলাইন ভিত্তিক কাজ সহজতর হবে। 5G এর লো ল্যাটেন্সির জন্য ভিডিও গেম খেলার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। মোবাইল বা কম্পিউটারে ডাউনলোড না করেই হাই-প্রোফাইল গেম খেলা যাবে। সেইসাথে হাই কোয়ালিটি গেমিং কম্পিউটার ছাড়াই যেকোনো কম্পিউটারে গেম খেলা যাবে। ক্লাউড কম্পিউটিং এর মাধ্যমে গেম স্ট্রিম করেই খেলা যাবে। অদূর ভবিষ্যতে আমাদের ইন্টারনেট জগৎকে আরও বাস্তবিক করতে চলে আসছে ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি। ভার্চুয়াল রিয়েলিটির এক্সপেরিয়েন্স 5G এর কল্যাণে হবে আরো দারুণ। এমনকি মোবাইলে 5G নেটওয়ার্ক ব্যবহার করলে চার্জ অনেক কম খরচ হবে। কারণ 5G নেটওয়ার্ক সাপোর্টিভ মোডেম চিপগুলো আগের চেয়ে অনেক পাওয়ার এফিশিয়েন্ট করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, “5G ফোনগুলোতে ব্যাটারির চার্জ আরও বেশি দীর্ঘস্থায়ী হবে।” ইতোমধ্যেই নকিয়া জানিয়েছেন যে, “5G নেটওয়ার্ক ৯০ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হবে।” স্মার্ট হোম, স্মার্ট কার এই প্রযুক্তিগুলো 5G এর মাধ্যমে আরও প্রসার বাড়বে। 5G নেটওয়ার্কের দ্রুত গতি এবং আলট্রা-লো-ল্যাটেন্সির কারণে এই প্রযুক্তিগুলো নির্ভুলভাবে তাদের কার্যক্রম করতে পারবে। 5G এর বেশি গতির ফলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা অনেকভাবে সুবিধা পাবে। 5G শুধুমাত্র উচ্চগতির ইন্টারনেট কানেকশনই না, 5G ব্যবহার করে যোগাযোগ মাধ্যম এবং প্রযুক্তি ব্যবস্থায় বিশাল পরিবর্তন আসবে।

বাংলাদেশে 5G এর আগমন

5G নেটওয়ার্ক সেবা বিশ্বের বেশ কিছু বড় দেশে ইতোমধ্যে চালু হয়েছে। যেমন- যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, যুক্তরাজ্য, স্পেন, সুইজারল্যান্ড ও দক্ষিণ কোরিয়া। একই সঙ্গে এই সেবাকে আরো কীভাবে উন্নত করা যায় সেটি নিয়েও কাজ চলছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আরো অনেক দেশ এই সেবার সঙ্গে যুক্ত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ-টিআরএনবি আয়োজিত ‘ফাইভজি: ইকোসিস্টেম ইন বাংলাদেশ অ্যান্ড আপকামিং টেকনোলজিস’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার জানিয়েছেন, “চলতি বছরের ডিসেম্বরেই পরীক্ষামূলকভাবে চালু হবে এই সেবা। প্রাথমিকভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব টেলিকম কোম্পানি টেলিটকের মাধ্যমে উদ্বোধন করা হবে 5G। পরবর্তীতে অন্যান্য অপারেটররা এই সেবা চালু করবে।” তিনি আরও জানান, “ডিসেম্বরে দুটি বিশেষ দিবস রয়েছে- ১২ ডিসেম্বর ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস ও ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস। এই দুই দিনের যেকোন একটিতে 5G এর যুগে প্রবেশ করবে বাংলাদেশ।” টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাহাব উদ্দীন বলেন, “5G সেবা চালুর জন্য ইতোমধ্যে তরঙ্গ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ডিসেম্বরে এটি উদ্বোধনের জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।” প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় নির্দেশনা দিয়েছেন মুজিবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষেই এই সেবা চালু করতে। তিনি বলেন, “প্রথমে ঢাকায় ২০০টি সাইটে এই সেবা পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হবে। পরবর্তীতে যেখানে ফাইবার কোয়ালিটি ভালো হবে সেখানে এই সেবা সম্প্রসারণ করা হবে।” প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, “5G নেটওয়ার্ক সেবা চালু হলে দেশের চিকিৎসা ও শিক্ষা খাতে উন্নয়ন ঘটবে, বদলে যাবে শিল্প-কারখানায় উৎপাদন ব্যবসা ও মানুষের দৈনন্দিন জীবন যাত্রা। পাওয়া যাবে উন্নত টেলিমেডিসিন সেবা। এতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষও সহজেই উন্নত চিকিৎসা সেবার সুযোগ গ্রহণ করতে পারবে। এমনকি দেশের চিকিৎসকের পাশাপাশি বিদেশের অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গেও পরামর্শ করা যাবে। ৫জি প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনলাইনে ক্লাস করতে পারবে দেশের প্রত্যন্ত ও দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থীরাও। অর্থাৎ হাতে মুঠোয় চলে আসবে বিশ্বের নামিদামী সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ক্লাস। এর মাধ্যমে দূর হবে প্রযুক্তিগত বৈষম্য।”
তবে 5G তে যাওয়ার আগে অবকাঠামো তৈরির কথা জানিয়ে গ্রামীণফোনের সিইও ইয়াসির আজমান জানিয়েছেন, “5G নেটওয়ার্ক ব্যক্তির জন্য নয়, এটি হবে সমাজের জন্য। এর ফলে প্রান্তিক পর্যায়ে শিক্ষা – স্বাস্থ্যসহ সব ক্ষেত্রে সেবা চালু হবে। বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে শিল্প-গার্মেন্টস শিল্পের মতো শিল্প কারাখানায়। এজন্য ইকোসিস্টেম উন্নত করতে হবে। প্রচুর 5G টাওয়ার লাগবে, নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে হবে এবং অবকাঠামো তৈরি করতে হবে।
জানা গেছে, 5G সেবা দিতে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান টেলিটককে ২ হাজার ১৪৪ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই অর্থ রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত কোম্পানিটি তাদের নেটওয়ার্ক আধুনিকায়নে ব্যয় করবে।

এই ছিলো 5G সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। যেকোনো প্রশ্ন জাগলে নির্দ্বিধায় কমেন্টবক্সে কমেন্ট করুন। এবং টেকনোলজি সম্পর্কে আরও তথ্য জানতে আমাদের সঙ্গেই থাকুন। সেইসাথে আমাদের অন্যান্য আর্টিকেলগুলোও পড়তে পারেন। ধন্যবাদ।