জেমাইস ভ্যু

জেমাইস ভ্যু মানবজীবনের আরেকটি রহস্য। এটিকে দেজা ভ্যু এর বিপরীত বলা হয়। এই অনুভূতির কারনে একজন মানুষ অনেক পরিচিত জিনিস চিনতে পারে না। তার কাছে মনে হয় যেন সে এটি প্রথমবার দেখছে। এটি অতি পরিচিত মুখের ক্ষেত্রেও হতে পারে, মনে হতে পারে জীবনেও সে তাকে দেখে নি।

জামাইস ভ্যু একটি ফরাসি শব্দ, যার অর্থ পূর্বে কখনো দেখা হয় নি। এটি দেজা ভ্যু এর বিপরীত হিসাবে বিবেচিত হয়। তবে এটি সারাবিশ্বে খুব বিরল বলে মনে করা হয়। যারা জামাইস ভ্যু অনুভব করেন তাদের স্বল্পমেয়াদী স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায়। ফ্রান্সের গ্রেনোবেল আল্পস বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি অফ সাইকোলজি অ্যান্ড নিউরোকগনিশনের মেমরি গবেষক ক্রিস মৌলিন বলেছেন, “জেমাইস ভ্যু হলো দেজা ভ্যু এর বিপরীত।” তিনি আরও বলেছেন, “জামাইস ভ্যু এর ক্ষেত্রে স্বল্প সময়ের জন্য স্মৃতি হারানো হয়। তখন উক্ত জিনিসটি অপরিচিত বলে মনে হয়। আগে দেখেছে কিংবা সম্প্রতি দেখেছে, এটির ক্ষেত্রেও এমন মনে হতে পারে।” জামাইস ভ্যু -এর একটি উদাহরণ হলো, খুব পরিচিত কাউকে দেখার পর হঠাৎ তার বৈশিষ্ট্যগুলি নতুন মনে হবে। এমনকি তাকে একজন অপরিচিত বলে মনে হতে পারে, কিন্তু সে এটিও জানেন যে তিনি তার পরিচিত। এই অদ্ভুত অনুভূতিটি ই হলো জেমাইস ভ্যু। তবে এটি ক্ষণস্থায়ী, বিলীন হওয়ার আগে মাত্র কয়েক সেকেন্ড বা মিনিট স্থায়ী হয়।
জেমাইস ভ্যু যাচাই করার একটি উপায় হলো বারবার কিংবা জোরে জোরে কোনও শব্দ লেখা বা বলা। কিছু মুহুর্ত পর যদি শব্দটি ভুলে যাওয়া হয়, তাহলে সে ব্যক্তি জেমাইস ভ্যু আক্রান্ত। জেমাইস ভ্যু যদিও স্বল্প সময়ের জন্য হয় কিন্তু এটি ই একজন ব্যক্তির জন্য কঠিন সময়। স্নায়ুবিজ্ঞানের ক্ষেত্র থেকে, এই ঘটনাটিকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তারা বলছে, মস্তিষ্কের বিভিন্ন অঞ্চলের সমন্বয়তে এই পরিবর্তন। এই পরিবর্তনটি তখনই হয় যখন নিউরাল নেটওয়ার্কগুলোর মধ্যে থেকে পিছিয়ে পড়ে, যা সাময়িকভাবে বাহ্যিক পরিবেশের বোঝাপড়াটি বিকৃত করে দেয়। যদিও যে কারো সাথে এই সংবেদন বিচ্ছিন্নতাতে ঘটতে পারে কিন্তু মৃগী, দীর্ঘস্থায়ী মাথাব্যথা বা মাথার জখমের মতো স্নায়বিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে এই ঘটনাটি সাধারণ বিষয়। এছাড়াও অন্যান্য অনেক ব্যাধির জন্য জেমাইস ভ্যু ঘটতে পারে, যেমন ল্যাবাইরিন্থাইটিস বা ভ্যাসিটিবুলার নিউরোনাইটিস, যা মস্তিষ্কের তথ্য প্রক্রিয়া করার পথে হস্তক্ষেপ করে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কানাবিনয়েড, হ্যালুসিনোজেনিক ড্রাগ ও নিকোটিন এর জন্য জেমাইস ভ্যু এর প্রভাব পড়তে পারে। পাশাপাশি ঘুমের অভাব, উদ্বেগজনিত ব্যাধি, হতাশাগ্রস্তও এটির প্রভাবের কারণ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত।

আমাদের মস্তিষ্ক হলো মানব দেহ এর সমস্ত অঙ্গগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জটিল এবং রহস্যময় অঙ্গ। এটি একজন ব্যক্তির বিকাশ, উপলব্ধি এবং বোঝার জন্য প্রয়োজনীয় কাজ সম্পাদনের দায়িত্বে রয়েছে। কিন্তু মাঝে মাঝে এই অঙ্গটি নিজের মতো কাজ করে এবং শরীরের বাকি অংশগুলোকে অবহেলা করে। মানব মস্তিষ্ক বিভ্রান্ত করতে সক্ষম এমন একাধিক সংবেদন এবং ঘটনাও তৈরি করে। এর মধ্যে এমনই একটি হলো স্বল্প-পরিচিত জেমাইস ভ্যু। জেমাইস ভ্যু দেজা ভ্যু এর তুলনায় খুবই কম ও বিরল। মৌলিন এর মতে, জেমাইস ভ্যু অনুভবকৃত ব্যক্তি এই বিষয়টি গোপন রাখে। কারণ এটি অন্য ব্যক্তির কাছে ব্যাখ্যা করলে তিনি সন্দেহের চোখে দেখতে পারে। এই কারণে হয়ত ঘটনাটি বিরল এবং আন্ডার রিপোর্টেড। তবে যেটি ই হোক, একজন জেমাইস ভ্যু অনুভুতিকৃত ব্যক্তির এটি নিয়ে বেশি চিন্তিত হওয়া উচিত নয়। যদি না এটি জীবনে নেতিবাচক কোনো প্রভাব ফেলে। মৌলিন বলেছেন, “জেমাইস ভ্যু অনুভবকৃত ক্ষমতা মস্তিষ্কের জন্য সাধারণ লক্ষণ, যেমন দেজা ভ্যু। এসবই হলো শুধুমাত্র ব্রেইনের বিভ্রম। মানবমস্তিষ্কের জটিল খেলাও বলা যায়, কিন্তু যেটির যুক্তিগত কারন এখনো মেলেনি। কিন্তু আশা রয়েছে, বিজ্ঞান খুব শীঘ্রই সমাধান নিয়ে আসবে এবং আমাদের অপেক্ষার অবসান ঘটাবে।

এই ছিলো জেমাইস ভ্যু সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। যেকোনো প্রশ্ন জাগলে নির্দ্বিধায় কমেন্টবক্সে কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।